মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষায় টিকব এমন বিশ্বাস ছিল, কিন্তু আমি কল্পনাও করিনি প্রথম হব। সবার দোয়ায় যখন আমি দেশসেরা হয়েছি, তখন নিউরোসার্জন হয়ে দেশের অসহায় মানুষের সেবা করতে চাই। গতকাল সোমবার দুপুরে মোবাইল ফোনে কথাগুলো বলছিলেন সদ্য ঘোষিত ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া রাফসান জামান।
তার প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৯৪.২৫। মেরিট স্কোর ২৯৪.২৫। তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তার ভর্তি পরীক্ষার রোল নম্বর ১৫১০১০৪। মেধা তালিকায় প্রথম হওয়ার সুবাদে তিনি ঢাকা মেডিক্যালে সুযোগ পেয়েছেন। রাফসান জামান বলেন, আমার কখনোই মনে হয়নি আমি প্রথম হব। ৯০ নম্বর সঠিক উত্তর দিয়েছি। দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে বাকি উত্তর দিয়ে হল থেকে বের হয়েছি। আত্মবিশ্বাস ছিল মেডিক্যালে টিকব।
কিন্তু প্রথম হব সেটা কল্পনাতেও ছিল না। রাফসানের ইচ্ছা একজন নিউরোসার্জন হয়ে গরিব অসহায় রোগীদের সেবা করা। কারণ শরীরের মূল অংশ হচ্ছে ব্রেইন। ব্রেইন যখন সবকিছুই আমি সেটা নিয়ে আগামী ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে চাই। তিনি বলেন, মায়ের ইচ্ছা ছিল ডাক্তার বানানোর। নিজেরও ইচ্ছা ছিল। ইচ্ছা শক্তিকে বাস্তবে রূপ দিতে আমি প্রতিদিন ৬-৭ ঘণ্টা পড়াশোনা করেছি। তবে রাত জেগে পড়িনি। মোবাইল ফোনের আসক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, এইচএসসির পর আমি মোবাইল হাতে নিইনি। কোনো তথ্য খুঁজতে হলে কম্পিউটারে বসে খুঁজতাম। তাও বেশিক্ষণ থাকতাম না।
আগামীতে যারা মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে তাদের জন্য পরামর্শ কী? জানতে চাইলে রাফসান বলেন, অধিকাংশই চিকিৎসক না প্রকৌশলী হবেন সেটা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান। আগে লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। সেভাবে পড়াশোনা গোছাতে হবে। যেসব বিষয় মুখস্থ করার থাকবে সেগুলো পরীক্ষার আগে মুখস্থ করলে মনে থাকবে বেশি। আর বাকিগুলো বুঝে পড়তে হবে। এ ছাড়া পুরো পাঠ্যবইটি মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। বেশি রাত জেগে পড়াশোনা করলে শরীর খারাপ হবে। নিজেকে অন্যদের থেকে একটু দূরে রাখা উচিত।
মেডিক্যাল ভর্তির জন্য কোথায় কেচিং করেছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি প্রথমে চট্টগ্রামের হালিশহরের রেটিনা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়ে নিয়মিত ক্লাস করেছি। তবে পরীক্ষার আগে মেধা যাচাইয়ের জন্য উন্মেষ কোটিংয়ে মডেল টেস্ট দিয়েছি।
রাফসানের বাবা একেএম শামসুজ্জামান ছিলেন রংপুর ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি সিটি গ্রুপের উপমহাব্যবস্থাপক। আর রাফসানের গ্রামের বাড়ি রংপুর সদরে হলেও তার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর এলাকায়। ছোটবেলায় চট্টগ্রাম গ্রামার স্কুলে পড়েছেন। সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পান রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে। সেখান থেকে এসএসএসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি।
উচ্চ শিক্ষিত মা কাউসার নাজনীন বলেন, আমার এক মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়ে সাদিয়া ইবনাত রাইসা চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগ থেকে স্নাতক পাস করেছে। সেও ভর্তি পরীক্ষার মেধা তালিকায় দ্বিতীয় হয়েছিল। এখন আমার ছেলে মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় দেশসেরা হয়েছে। ফল প্রকাশের পর থেকে আত্মীয়স্বজন ফোন করছেন। ছেলের এ সাফল্যে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি আরও বলেন, যেভাবে শিক্ষাঙ্গনে প্রতিহিংসার শিকার হয়ে ছাত্ররা লাশ হচ্ছে, এতে ভয়ও আছে। ভালোয় ভালোয় তার পড়াশোনা শেষ হলেই আমরা চিন্তামুক্ত হব।