বাংলাদেশে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ নিজের বিষয়ে পাঠদানে আত্মবিশ্বাসী নন। তারা নিজেদের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান নিয়েও সন্তুষ্ট নন। তারা মূলত এসএসসি বা এইচএসসি পাস সনদ নিয়ে শিক্ষকতা করছেন। তবে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী শিক্ষকদের অধিকাংশ নিজেদের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানে সন্তুষ্ট। সম্প্রতি জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির (নেপ) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
সমতল, উপকূল, পাহাড়, হাওর ও চর-সব অঞ্চলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে দেশের ১২টি জেলার ৩৮৪টি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে পাঠদানকেন্দ্রিক নানা বিষয়ে আত্মমূল্যায়নের তথ্য সংগ্রহ করেন নেপের গবেষক দল। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ‘মিজারিং টিচার ইফেক্টিভনেস ফর প্রাইমারি টিচারস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়।
গবেষণায় শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়, যেসব বিষয় বিদ্যালয়ে পড়ানো হয়, সেগুলো নিজেরা কতটুকু বুঝতে পারেন তারা?
নেপের প্রতিবেদনে শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাগত ডিগ্রি ও চাকরির বয়সের ভিত্তিতে শিক্ষকদের আত্মমূল্যায়নের তথ্য তুলে ধরা হয়। আত্মমূল্যায়নের ফলাফলকে তিনটি সূচকে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো সন্তুষ্ট, কোনোমতে সন্তুষ্ট ও অসন্তুষ্ট।
প্রতিবেদন বলছে, যেসব শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি (মাধ্যমিক) ও এইচএসসি (উচ্চ মাধ্যমিক) পর্যায়ের তাদের ১৮ দশমিক ২ শতাংশ নিজেদের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান বিষয়ে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। এছাড়া ৫৪ দশমিক ৫ শতাংশ কোনোমতে সন্তুষ্ট ও ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ সন্তুষ্ট বলে আত্মমূল্যায়নে উঠে এসেছে।
তবে স্নাতক ডিগ্রিধারী শিক্ষকদের ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান বিষয়ে ২ দশমিক ৮ শতাংশ অসন্তুষ্ট, ২২ দশমিক ২ শতাংশ কোনোমতে সন্তুষ্ট ও ৭৫ শতাংশ সন্তুষ্ট। স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের ১ দশমিক ৭ শতাংশ অসন্তুষ্ট, ২৪ দশমিক ১ শতাংশ কোনোমতে সন্তুষ্ট ও ৭৪ দশমিক ১ শতাংশ সন্তুষ্ট।
বর্তমানে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ৪ লাখ শিক্ষক কর্মরত আছেন। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের তথ্য অনুযায়ী এ সংখ্যা ৩ লাখ ৫৯ হাজারের বেশি। তবে, গত জানুয়ারি মাসে নতুন ৩৫ হাজারের বেশি শিক্ষক বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন। তারা সবাই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। এক সময় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পাস নারীদের শিক্ষকতার সুযোগ থাকলেও ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে জারি করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালায় তা বন্ধ হয়। এখন শিক্ষক হতে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হয়।
২০২০ খ্রিষ্টাব্দের বাংলাদেশ প্রাইমারি এডুকেশন অ্যানুয়াল সেক্টর পারফরম্যান্স রিপোর্ট বলছে, প্রাথমিকের শিক্ষকদের ৬ দশমিক ৫ শতাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি, ২৪ দশমিক ৮ শতাংশের এইচএসসি, ৩৭ দশমিক ৯ শতাংশের স্নাতক ও ৩০ দশমিক ৫ শতাংশের সর্বোচ্চ ডিগ্রি স্নাতকোত্তর।