দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক: খতনা করাতে গিয়ে ভুল চিকিত্সায় ছয় বছরের শিশু আয়ানের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আলোচনায় আসা রাজধানীর বাড্ডার সাঁতারকুলে অবস্থিত ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিবন্ধন ছিল না বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নিবন্ধন ছাড়া চিকিত্সা কার্যক্রম পরিচালনা করা অবৈধ। নিবন্ধন ছাড়াই শিশু আয়ানকে চিকিত্সা দেওয়া এবং পরে শিশুটির মৃত্যুর কারণে ঐ হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মইনুল আহসান।
তিনি বলেছেন, শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর স্বপ্রণোদিত হয়েই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আগামী ১৮ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা। যেহেতু, বিষয়টি তদন্তাধীন, তাই আমরা এই মুহূর্তে ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তবে, তদন্ত কার্যক্রম শেষ হলে অবশ্যই আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।
ডা. আবু হোসেন মো. মইনুল আহসান বলেন, ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদিও নিবন্ধনের আবেদন করেছে, কিন্তু তাদের আবেদন ক্রুটিযুক্ত। তাদের আবারও যথাযথভাবে আবেদন করতে হবে। কিন্তু, এখন যেহেতু নিবন্ধন নেই, তাদের চিকিত্সা কার্যক্রম চালানোর কোনো সুযোগ নেই।
এর আগে বৃহস্পতিবার ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অভিযুক্ত চিকিত্সক ডা. সাঈদ সাব্বির ও ডা. তাসনুভা মাহজাবিনকে আটক করাসহ ছয় দফা দাবিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গেটে মানববন্ধন করেছে শিশুটির পরিবার ও স্বজনরা।
শিশু আয়ানের পরিবারের সদস্যরা বলেন, আয়ান হত্যার মতো ঘটনা এখন আমাদের দেশে নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু ব্যবসায়ী ডাক্তার এবং কর্তৃপক্ষের কারণে অনেক পরিবার তাদের স্বজন হারাচ্ছে। এমনকি, এসব ঘটনায় স্বজনরা সুষ্ঠ বিচারও পাচ্ছে না। ফলে, এসব ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা সরকারে কাছে এর সুষ্ঠু এবং ন্যায়বিচারের দাবি করি, যাতে এমন ঘটনা আর কোনো ডাক্তার বা কর্তৃপক্ষ করতে সাহস না পায়।
গত ৩১ ডিসেম্বর সুন্নতে খতনা করানোর জন্য পাঁচ বছরের শিশু আয়ানকে বাড্ডার মাদানী অ্যাভিনিউয়ে ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তার অভিভাবকরা। সেখানে অভিভাবকদের অনুমতি ছাড়াই শিশু আয়ানকে ফুল এনেসথিসিয়া (জেনারেল) দিয়ে সুন্নতে খতনা (মুসলমানি) করান চিকিত্সকরা। খতনা শেষ হওয়ার পর আয়ানের জ্ঞান না ফেরায় তাকে সেখান থেকে পাঠানো হয় গুলশান-২-এর ইউনাইটেড হাসপাতালে। সেখানে পিআইসিইউতে (শিশু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। আট দিন পর রবিবার রাত ১১টা ২০ মিনিটে চিকিত্সকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা শামীম আহমেদ বাদী হয়ে ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এনেসথেসিয়া স্পেশালিস্ট ডা. সাইদ সাব্বির আহমেদ, হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. তাসনুভা মাহজাবিন ও একজন পরিচালককে আসামি করে বাড্ডা থানায় মামলা করেন।