বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) নীতিমালা লঙ্ঘন করে ৯ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়েছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হাসিবুর রশীদ। ৬ষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে প্রফেসর ড. শওকত আলী যোগদানের পর শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আগস্ট-২০২৪ মাসের বেতন বিলে স্বাক্ষর করেন। এখানে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পদোন্নতি প্রাপ্ত ৮ জনের বেতন-ভাতা স্থগিত করা হয়।
তারা হলেন, সংস্থাপন শাখার ড. জিয়াউল হক, মোস্তাফিজার রহমান মন্ডল, জনসংযোগ দপ্তরের মোহাম্মদ আলী, পবিহন পুলের তাপস কুমার গোস্বামী, কাউন্সিল শাখার ময়নুল আযাদ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের ফিরোজুল ইসলাম, সিডিটি’র এসএম আব্দুর রহিম ও উপাচার্য দপ্তরের খায়রুল ইসলাম। এছাড়াও অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে উম্মে ফারহানা চৌধুরীকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হলেও গত আড়াই মাসেও কোন নিয়োগপত্র দেননি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী। ফলে তিনি যোগদান করতে পারেননি।
নথিপত্র থেকে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ও সমমর্যাদার চতুর্থ গ্রেডের পদে কর্মকর্তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউজিসির বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী উম্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দিতে হবে। এ বিষয়ে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ অক্টোবর সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি নির্দেশনা প্রদান করে ইউজিসি। যাতে বলা হয়েছে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অর্থ ও হিসাব এবং লাইব্রেরি এই চার দপ্তরে ৪র্থ গ্রেডভুক্ত অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার বা সমমানের পদ থাকবে। এই পদসমূহে ইউজিসি’র অনুমোদন সাপেক্ষে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ দিতে হবে, পদোন্নতি/আপগ্রেডেশন/পর্যায়োন্নয়ন দেয়া যাবে না।
ইউজিসির এই নির্দেশনা অমান্য করে বেরোবির সাবেক ভিসি অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার/সমমানের পদে পদোন্নতির জন্য গত ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে প্রথম বার কর্মকর্তাদের ৪র্থ গ্রেডে পদোন্নতি দেয়ার জন্য বাছাই বোর্ড এর আয়োজন করেছিলেন। বিষয়টি ইউজিসি’র নজরে আসলে ১১ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে পদোন্নতি বা আপগ্রেডেশন কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ প্রদান করে এবং দুই কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা তলব করেছিল।
এরপর ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১১ ডিসেম্বর তারিখে পুনরায় একই পদে আপগ্রেডেশনের জন্য বাছাই বোর্ডের সভা আহ্বান করা হলে কমিশন আবারো ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে পুনরায় এ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দুই কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনকে লিখিতভাবে জানাতে বলে। ফলে দি¦তীয় দফায় বোর্ডের কার্যক্রম ভেস্তে যায়।
ইউজিসির নিষেজ্ঞার কারনে অধ্যাপক হাসিবুর রশীদ বাছাই বোর্ডের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের আপগ্রেডেশন দিতে না পেরে সরকারি ‘‘চাকরি [স্ব-শাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ] (বেতন ভাতাদি) আদেশ ২০১৫ এর অনুচ্ছেদ ১২’’ এর ভুল ব্যাখাপূর্বক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাগণকে ৪র্থ গ্রেড প্রদানের কার্যক্রম গ্রহণ করলে কমিশন দুই দফা চিঠি দিয়ে সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিলে এই প্রক্রিয়াটিও বাতিল হয়ে যায়। এরপর ৩০ মে তারিখে প্রেরিত ইউজিসি’র ৬ষ্ঠ দফা চিঠি উপেক্ষা করে গত ৩১ মে ২০২৪ তারিখে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ও সমমানের পদে আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে পদোন্নতি দেয়ার জন্য বাছাইবোর্ড সম্পন্ন করেছিলেন সাবেক উপাচার্য।
পদোন্নতি প্রদানের জন্য গঠিত বাছাই বোর্ডটিও ছিল ত্রুটিপূর্ণ। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ৫ম গ্রেডের উপসচিব এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম ছিলেন ৪র্থ গ্রেডের কর্মকতাদের পদোন্নতি বোর্ডের বিশেষজ্ঞ সদস্য, আবার সাবেক ট্রেজারার ড. মজিব উদ্দিন আহমেদ ঢকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে ও ট্রেজারার হিসেবে ২টি স্বাক্ষর করেছেন।
এই ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগ বোর্ড পুর্নগঠনসহ অবৈধভাবে পদোন্নতি প্রাপ্তদের নিয়োগ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন সংক্ষুব্ধ ৫ কর্মকর্তা । রিট শুনানি শেষে গত ২৪ জুলাই তারিখে হাইকোর্ট স্ট্যাটাস ক্যু দেন। হাইকোর্টের আদেশ সত্তে¦ও সাবেক ভিসি ৮ কর্মকর্তাকে জুলাই মাসে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে বেতন প্রদান করেন এবং তাদের মধ্যে ড. জিয়াউল হককে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে রেজিস্ট্রারের দায়িত্বও দিয়েছিলেন।
বর্তমান উপাচার্য যোগদানের পর হাইকোর্টের আদেশ ও ইউজিসির নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তাঁর নজরে আসলে ঐ ৮ কর্মকর্তার বেতন স্থগিতের সিদ্ধান্ত দেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ শওকত আলী জানান আলী নতুন নিয়োগ পেয়েছি । বিশ^বিদ্যালয়ের লিগ্যাল এডভাইজারের মতামত গ্রহণ সাপেক্ষে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয় হবে জানান তিনি ।