নন-ক্যাডার চাকরি প্রার্থীরা বিপাকে পড়েছেন। বিধি সংশোধন আটকে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে সব ধরনের নন-ক্যাডার নিয়োগ কার্যক্রম। চলতি বছরের ৩০ মার্চ ৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ হলেও এখনো পর্যন্ত নন-ক্যাডার নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। কবে নাগাদ নন-ক্যাডার নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে তা বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা কেউই।
এছাড়া বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদসংখ্যা উল্লেখ করায় তৈরি হবে দীর্ঘসূত্রতা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিএসসি উলটো পথে হাঁটছে। নন-ক্যাডার ইস্যু নিয়ে গণমাধ্যমের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পিএসসির শীর্ষ ব্যক্তিরা। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার ওপর এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
এ ব্যাপারে জানতে পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে এর আগে তিনি নন-ক্যাডার নিয়ে বলেছিলেন, নন-ক্যাডার নিয়ে সৃষ্ট সমস্যায় পিএসসির কোনো হাত নেই। সরকারের আইনকানুন অনুসরণ করে নন-ক্যাডার নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করে পিএসসি।
নন-ক্যাডার নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালার আওতায় ৪০তম বিসিএসে নন-ক্যাডার নিয়োগ দিতে পারছে না বলে মনে করছে পিএসসি। ২০১৪ সালের ১৬ জুন নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করে প্রথম শ্রেণির পাশাপাশি দ্বিতীয় শ্রেণির সুপারিশের সুযোগ দেওয়া হয়। তখন ২৮তম বিসিএস থেকে ৩৪তম বিসিএস পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তিতে পদ উল্লেখ না থাকলেও সরকারের অনুরোধ সাপেক্ষে বিসিএস থেকে নন-ক্যাডার নিয়োগের সুপারিশ করতে পারবে পিএসসি বলে বিধিতে উল্লেখ করা হয়। এরপরও পিএসসি ৩৫তম বিসিএস থেকে ৩৮তম বিসিএস পর্যন্ত নন-ক্যাডার নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করে। এখন বিধির দোহাই দিয়ে ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার নিয়োগ বন্ধ রেখেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
নন-ক্যাডার নিয়োগের বৈধতা চেয়ে গত ২৩ আগস্ট পিএসসি থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পত্র পাঠানো হয়। এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, বিসিএসে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের আগে যত শূন্য পদই আসুক, তা একটি বিসিএসে নিয়োগ দিয়ে শেষ করা যাবে না। কোন শূন্য পদ কোন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় এসেছে, তা বিবেচনায় আনতে হবে। এখন থেকে নতুন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডার পদের সংখ্যাও উল্লেখ থাকবে। ৩৫ থেকে ৪৪তম বিসিএসের নন-ক্যাডার নিয়োগের বৈধতা চাওয়া হয় ঐ চিঠিতে। নন-ক্যাডার নিয়োগের বৈধতা দিতে বিধি সংশোধন করতে হচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের।
এদিকে নন-ক্যাডার জনপ্রশাসনের দায়িত্বে দেওয়ার ফলে জটিলতা বাড়বে বলে মনে করছেন পিএসসি সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মূলত পিএসসিকে ক্যাডার পদের চাহিদা পাঠিয়ে থাকে। জনপ্রশাসনের হাতে নন-ক্যাডারের দায়িত্ব দেওয়ার মাধ্যমে পিএসসি তার সাংবিধানিক অবস্থান দুর্বল করেছে।
উল্লেখ্য, গত কয়েকটি বিসিএসে মেধার ভিত্তিতে ক্যাডার পদে নিয়োগের পর উত্তীর্ণ বাকি প্রার্থীদের নন-ক্যাডার হিসেবে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হতো। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে তাদের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শূন্য পদের সংখ্যা কত, তা পিএসসিতে পাঠানোর অনুরোধ করা হতো। সেখান থেকে পাঠানো পদের চাহিদা অনুযায়ী মেধার ভিত্তিতে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হতো।