সাত দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় আন্দোলন স্থগিতের ১৬ দিন পর আবারও মাঠে নেমেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২০ জুন) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে নীলক্ষেত অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন তারা। শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে ওই এলাকার সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। যানজটের কারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীরাও ভোগান্তিতে পড়েছে৷
আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের হয়রানির প্রতিবাদে ও সাত দফা দাবিতে তারা এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন।
শিক্ষার্থীদের অবরোধের বিষয়ে নিউ মার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের বলেছি যেন সড়ক ছেড়ে দেয়। তাদের এসব দাবির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মহলে কথা বলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য চেষ্টা করছি। আশা করি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান করছে। শিক্ষার্থীদের আশেপাশে পুলিশকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
সরকারি ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমন্বয়ক তসলিম চৌধুরী বলেন, আমরা সুপ্রিয়া ম্যামের সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি আমাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। আজকে এ বিষয়ে মিটিং রয়েছে। মিটিংয়ে যেন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসে এজন্য আমরা নীলক্ষেতে অবস্থান কর্মসূচি করছি।
এর আগে, গত ৪ জুন আন্দোলনকারীরা সকাল ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে মিছিল নিয়ে ইডেন মহিলা কলেজের ফটক অবরুদ্ধ করে ও ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য্যের সাথে সাত দফা দাবি নিয়ে দেখা করেন।
শিক্ষার্থীদের সাতদফা দাবিগুলো হলো—
১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের হয়রানির কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
২. যে সকল শিক্ষার্থী পরবর্তী বর্ষের ক্লাস, ইনকোর্স পরীক্ষা ও টেস্ট পরীক্ষা পর্যন্ত অংশগ্রহণ করার পর জানতে পেরেছেন নন- প্রমোটেড তাদের সর্বোচ্চ ৩ বিষয় পর্যন্ত মানোন্নয়ন পরীক্ষার মাধ্যমে পরবর্তী বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার সুযোগ দিতে হবে।
৩. সকল বিষয়ে পাস করার পরও একটা স্টুডেন্ট সিজিপিএ সিস্টেমের জন্য নন প্রোমোটেড হচ্ছেন। সিজিপিএ শর্ত শিথিল করতে হবে।
৪. বিলম্বে ফলাফল প্রকাশের কারণ ও এই সমস্যা সমাধানে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। সর্বোচ্চ তিন মাসের (৯০ দিন) ফলাফল প্রকাশ করতে হবে।
৫. সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অভিভাবক কে / কারা? কোথায় তাদের সমস্যাসমুহ উপস্থাপন করবে? তা ঠিক করে দিতে হবে।
৬. একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রনয়ণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
৭. শিক্ষক সংকট, ক্লাসরুম সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী শাহরিয়ার বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনে শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধের দাবিসহ মোট ৭ দফা দাবিতে গত মাসের ২৫ তারিখ মানববন্ধন করে সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্যের কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি। পরে আমরা আবারও তার সাথে দেখা করে সাত দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানাই। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এখনও একাডেমিক বৈঠকেও এসব দাবির বিষয়ে কোনপ্রকার আলোচনা করা হয়নি। তাই আজ আবারও নীলক্ষেত অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছি।
দাবি আদায় না হলে অবরোধ ও লাগাতার কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও জানান তিনি।