বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী নীলিমা ইব্রাহিম এর জন্মদিন আজ। তিনি ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর গ্রামের এক জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
তার পিতা প্রফুল্লকুমার রায়চৌধুরী এবং মাতা কুসুমকুমারী দেবী। নীলিমা ইব্রাহিম বরাবরই একজন মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সকল পরীক্ষায় তিনি কৃতিত্বের পরিচয় দেন। তিনি খুলনা করোনেশন বালিকা বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা, কলকাতা ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশন থেকে আইএ এবং স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বিএবিটি পাস করেন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলা বিষয়ে এমএ পাস করেন। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম ‘বিহারীলাল মিত্র গবেষণা’ বৃত্তি লাভ করেন। একই বছর তিনি ইন্ডিয়ান আর্মি মেডিক্যাল কোরের ক্যাপ্টেন ডাক্তার মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং ঢাকায় স্থায়িভাবে বসবাস করতে থাকেন।
দীর্ঘকাল পরে ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিলো ‘সামাজিক ও রাজনৈতিক পটভূমিকায় ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা নাটক’। একই বছর তিনি ঢাকার আলিয়াঁসে ফ্রাঁসেস থেকে ইন্টারমিডিয়েট ইন ফ্রেন্স-এ ডিপ্লোমা লাভ করেন।
কর্মজীবনের শুরুতে নীলিমা ইব্রাহিম কলকাতার লরেটো হাউজে লেকচারার হিসেবে চাকরি করেন। তারপর দুবছর তিনি ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনের লেকচারার ছিলেন।
১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগে যোগদান করেন এবং ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে প্রফেসর পদে উন্নীত হন। তিনি বাংলা বিভাগের প্রধান, বাংলা একাডেমির অবৈতনিক মহাপরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করেন।
নীলিমা ইব্রাহিম বেশকিছু উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তার গ্রন্থবদ্ধ রচনাসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: গবেষণা শরৎ-প্রতিভা, বাংলার কবি মধুসূদন, ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙালী সমাজ ও বাংলা নাটক, বাংলা নাটক : উৎস ও ধারা, বেগম রোকেয়া, বাঙ্গালীমানস ও বাংলা সাহিত্য, সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা প্রসঙ্গ; ছোটগল্প রমনা পার্কে; উপন্যাস বিশ শতকের মেয়ে, আত্মজীবনী বিন্দু-বিসর্গ ইত্যাদি।
নীলিমা ইব্রাহিম আমৃত্যু মানুষের শুভ ও কল্যাণী চেতনায় আস্থাশীল ছিলেন। মুক্তবুদ্ধি, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও উদার মানবিকতাবোধই ছিল তার জীবনদর্শন। তিনি সর্বংসহা ধরিত্রীকে স্বর্গের চেয়েও সুন্দর ও কাঙ্ক্ষিত মনে করতেন এবং অধিকতর অস্থাশীল ছিলেন দেবত্বের চেয়ে মানবত্বে।
নীলিমা ইব্রাহিম সমাজকর্ম ও সাহিত্যে অনন্যসাধারণ অবদানের জন্য বহু পুরস্কার ও পদকে ভূষিত হয়েছেন। সেগুলো হলো: বাংলা একাডেমি পুরস্কার, জয়বাংলা পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার, লেখিকা সংঘ পুরস্কার, বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী স্মৃতিপদক, অনন্য সাহিত্য পুরস্কার, বেগম রোকেয়া পদক, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, শেরে-বাংলা পুরস্কার, থিয়েটার সম্মাননা পদক ও একুশে পদক। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।