বিচারকদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের আদালত অবমাননার রুলের রায় পিছিয়ে ১ আগস্ট দিন নির্ধারণ করেছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছেন।
এর আগে নুরের আইনজীবী রুলের জবাব দেয়ার জন্য সময় চেয়ে প্রার্থনা করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
বুধবার (৩ জুলাই) একই বেঞ্চে বিচারকদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে তার হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়। রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। শুনানিতে ভিপি নুরের দণ্ড কিংবা প্রতীকী হলেও শাস্তির দাবি করে রাষ্ট্রপক্ষ।
আদালতের ভিপি নুরের পক্ষে শুনানি করে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।
আদালতে উপস্থিত হয়ে তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে নিঃশর্ত ক্ষমাও চান। এরপর উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য দিন ধার্য করেছিলেন।
আইনজীবীরা বলেন, নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে এবারই প্রথম আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে। ভবিষ্যতে আদালত নিয়ে বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে তিনি আরও সচেতন থাকবেন বলে আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করা হয়। আদালতে শুনানি শুরু হওয়ার আগেই নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। আমরা ক্ষমা প্রার্থনার দুটি আবেদনও জমা দিয়েছি।
শুনানির এক পর্যায়ে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নুরুল হক নুরকে ডায়াসের কাছে ডেকে আনেন। তিনি নুরকে জিজ্ঞাসা করেন- আপনি কী ২৮ অক্টোবরের আগে বক্তব্য দিয়েছেন, না এরপর বক্তব্য দিয়েছেন। জবাবে নুর বলেন- না এর পরে বক্তব্য দিয়েছি। তখন আদালত বলেন, একজন সচেতন রাজনীতিবিদ হিসেবে এ রকম বক্তব্য দেয়ার পরদিন গণমাধ্যমে সংশোধনী কেন দিলেন না।
নুরুল হক বলেন, আমি ওই দিন জ্ঞাতসারে বক্তব্য দেইনি। আমার বক্তব্যের জন্য আমি অনুতপ্ত। গণতান্ত্রিক দেশে আইন-আদালত থাকতে হবে। আর আদালতের প্রতি আমার সব সময় শ্রদ্ধা আছে এবং তা ভবিষ্যতেও থাকবে।
তখন আদালত নুরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, একজন রাজনীতিবিদের কথায় কাজে সচেতনতা থাকা জরুরি। আদালত মর্যাদা রক্ষা সকল নাগরিকের দায়িত্ব। রাজনীতিবিদের কথায় উসকানি থাকলে, তার বিরূপ প্রভাব সাধারণ মানুষ বা কর্মীর মধ্যে পৌঁছে যায়। এ বিষয়ে সবার সতর্ক থাকা দরকার।
রাজধানীতে এক সমাবেশে আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছিলেন গণঅধিকার পরিষদের (একাংশ) সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। নুরুল হকের দেয়া বক্তব্য নিয়ে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর একটি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর নুরের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার একটি অভিযোগ প্রধান বিচারপতি বরাবর উপস্থাপন করা হলে, প্রধান বিচারপতি বিষয়টি বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এরপর স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্ট গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর রুল জারি করে নুরকে তলব করেন। সে ধারাবাহিকতায় আজ চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায়ের জন্য আগামী ১ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন আদালত।
প্রসঙ্গত, গতবছর ২৮ অক্টোবরে বিএনপি ও সমমনাদের ডাকা হরতাল অবরোধের সমর্থনে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে গণ অধিকার পরিষদ। পুরানা পল্টন বিজয়নগর পানির ট্যাংকি এলাকায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে গণ অধিকার পরিষদ। এ সময় বিচারকদের উদ্দেশ্যে আপত্তিকর মন্তব্য করেন নূর। এ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।