সোনাগাজী সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার উচ্চ মাধ্যমিক শাখার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলায় আসামিদের পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে পুলিশের ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার।
অভিযুক্তরা হলেন- পুলিশের সাবেক ডিআইজি বনজ কুমার, ওসি শাহ আলম, সন্তোষ চাকমা পিবিআই চট্টগ্রাম, পুলিশ সুপার মাঈন উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন, পিবিআই উপপরিদর্শক রতেপ চন্দ্র দাস ও লুৎফর রহমান।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে ফেনী সোনাগাজী আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা লোকমানের কাছে এ অভিযোগ করে মামলা দায়ের করা হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ফেনীর আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামিকে মামলায় অব্যাহতি দেওয়ার আশ্বাস দেন অভিযুক্তরা। এই আশ্বাসে আসামিদের পরিবার ও স্বজনদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধাপে মোট ৭৭ লাখ টাকাসহ সুযোগ-সুবিধা নেন তাঁরা। কিন্তু অভিযুক্তরা আসামিদের নির্যাতন করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করে আদালতের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড রায় প্রদান করা হয়।
এদিকে এ ঘটনায় কথা উল্লেখ করে মামলার সাক্ষী পিবিআই’এর উপপরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম বাবলু গত ১২ আগস্ট তাঁর ফেইসবুক আইডিতে নুসরাত জাহান রাফির হত্যা মামলার ঘটনাটি পুনরায় তদন্তের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে পোস্ট করেন। সেই পোস্টটি আসামিদের স্বজনদের নজরে এলে অভিযুক্ত ৭ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নুসরাত হত্যা মামলার ১৩ নম্বর আসামি ইমরান হোসেন মামুনের মা নুর নহার বাদী হয়ে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। আদালতের আদেশের অপেক্ষায় রয়েছেন বাদী।
ভুক্তভোগী পরিবারের বরাত দিয়ে মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী কামরুল হাসান বলেন, ‘পিবিআইয়ের বনজ কুমারসহ এখানকার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহ আলম এবং পিবিআইয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারা মামলার চার্জশিট দেওয়ার আগে বিভিন্ন সময়ে বনজ কুমারের কথা বলে ৩০ লাখ টাকা নেয়। এ ছাড়া এখানকার স্থানীয় কর্মকর্তারা নেয় ৪৭ লাখ টাকা। এরপর জানা গেছে তারা আরও অনেককিছু তাদের (ভুক্তভোগী) কাছ থেকে নিয়েছেন।’
এই আইনজীবী আরো বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছ থেকে যেটা জানা গেছে, তারা (অভিযুক্তরা) বিভিন্ন সময় এলাকায় সিভিল ড্রেসে যেতেন। নানান কথা বলে ভুক্তভোগীদের জায়গা সম্পত্তি বিক্রি করিয়ে টাকা নিতেন। এই টাকা নেওয়ার কারণেই পিবিআইয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন, ‘একটা ঘটনাকে তারা (অভিযুক্তরা) সাজিয়েছে। সেটি দিয়ে তারা আসামিদের খালাস করিয়ে দেওয়ার আশ্বাসের জন্য ব্যবহার করেছে। আসামিরা অলরেডি আদালতে পিটিশনের সময় বলেছে তাদের নির্যাতন করে জোর করে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে। পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা টাকা নেওয়ার পরে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ২০ জুলাই প্রধান অভিযুক্ত বনজ কুমার অবসরে যান। অপর অভিযুক্তরা পিবিআই এর বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত রয়েছেন।