নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির দর অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ১৭ টাকা।
মঙ্গলবার (১১ জুন) সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে সহসা এই বিদ্যুৎ পাওয়া নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, নেপাল থেকে আসবে জলবিদ্যুৎ যা মূলত বর্ষা মৌসুমে আসবে। আর শীতের সময় পানি শুকিয়ে যায় যে কারণে জলবিদ্যুতের উৎপাদন কোথাও কমে যায় ও কোথাও বন্ধ হয়ে যায়। চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমে এই বিদ্যুৎ দেশে আসার সম্ভাবনা অনেক কম।
ওই সূত্রটি জানিয়েছে, নেপালের ওই বিদ্যুৎ আসবে ভারত ঘুরে। এখানে ভারতের সঙ্গে আরেকটি বিষয়ে অমীমাংসিত রয়েছে। তারা আমাদের ভূমি ব্যবহার করে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সঞ্চালন লাইন নিয়ে যেতে চায়। বাংলাদেশের নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ের সঙ্গে সঞ্চালন লাইনের ইস্যুটি সমাধান করতে চায়। ওই সঞ্চালন লাইনের বিষয়ে বাংলাদেশের কিছু শর্ত রয়েছে। বাংলাদেশ চায় এমন একটি লাইন হোক, যা দিয়ে প্রয়োজনে বাংলাদেশ থেকে রফতানি-আমদানির সুযোগ থাকে। বাংলাদেশ চায় ভারতের উন্মুক্ত বাজারে বিদ্যুৎ কেনা-বেচার পথ খোলা রাখতে।
গত ৩১ জানুয়ারি সচিবালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারী সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে। ওই বৈঠকের পর নসরুল হামিদ বলেছিলেন, নেপাল থেকে ভারত হয়ে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির সব প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। আরও ৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টির অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী আরেক বক্তৃতায় বলেছিলেন, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপকেন্দ্র দিয়ে এই বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। নেপালের ন্যাশনাল ইলেকট্রিক অথরিটি এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছে।
নেপাল ও ভারতে বিদ্যুৎ বিক্রির সুযোগ রেখে নেপালের সুঙ্কোশি-৩ প্রকল্পে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিনিয়োগ করবে, যেখান থেকে ভারত ও নেপাল উভয়ের কাছেই বিদ্যুৎ বিক্রির সুযোগ থাকবে। আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে সীমানা অতিক্রম করে লাভজনক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা সম্ভব।
নেপাল ও বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার মধ্যে একটি অদ্ভুত মিল রয়েছে। যা দুই দেশকেই বিশেষভাবে লাভবান করতে পারে। নেপাল মূলত জলবিদ্যুৎ নির্ভর একটি দেশ। তাদের বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। নেপালে শীতের সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যায়, আবার চরম ঠান্ডার কারণে বেড়ে যায় বিদ্যুতের চাহিদা। এতে করে ঘাটতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটি।
অন্যদিকে বাংলাদেশে শীতের সময় চাহিদা কমে উদ্বৃত্ত থেকে চায় বিপুল পরিমাণ উৎপাদন ক্ষমতা। সে কারণে নেপাল শীতে বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে আগ্রহী। এতে করে উভয় দেশ লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। যেহেতু ভারতের ভূমি ব্যবহার করতে হবে তাই ভারতে সম্মতির ওপর নির্ভর করছে বিষয়টি। কয়েক বছর ধরেই বিষয়টি আলোচিত হয়ে আসছে।