নেড়ি কুকুরের ভাষণে শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি নিয়োগ বিত্তান্ত - দৈনিকশিক্ষা

নেড়ি কুকুরের ভাষণে শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি নিয়োগ বিত্তান্ত

সিদ্দিকুর রহমান খান |

উপস্থিত সর্বক্যাডার কর্মকর্তাবৃন্দ,

এখানে প্রকৃত ক্যাডার কর্মকর্তাদের মাঝে ভাষণ দিতে এলেও আমি আসলে একটা অ-ক্যাডার নেড়ি কুকুর। চাকরির বাজারে আছে- বিসিএস ক্যাডার, অপরাধ জগতের বাজারে আছে আর্মস ক্যাডার। আবার নন-ক্যাডার চাকরি পেতেও বিসিএস উতরাতে হয়। কিন্তু আমি এসবের কোনো কিছুই নই। নেড়ি হওয়ায় কুকুর শ্রেণিতেও আমার গুরুত্ব কম। তবু মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিয়োগে সিনিয়র অধ্যাপক খোঁজার আমলাতান্ত্রিক (প্রশাসন ক্যাডার) হিসেব-নিকেশ বর্ণনায় আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। বলা চলে, অনুরোধের ঢেঁকি গিলতে বাধ্য হয়েছি। 

শুনুন তাহলে শুরুর কথা। 

সপ্তাহ খানেক আগে আমি আমার অভ্যাস মতো খাবারের খোঁজে শিক্ষা ভবনের ডাস্টবিনের পাশে ঘুরঘুর করছিলাম। হঠাৎ কয়েকজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা আমাকে বললেন, মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি নিয়োগে সিনিয়রিটি তত্ত্ব ও সাদেক-ওসমান-নাহিদ-দীপু বিষয়ে একটা ভাষণ দিতে হবে।

আমি তাদের বিনয়ের সঙ্গে বললাম, অ-ক্যাডার কুকুর জাতির মধ্যে শিক্ষার কোনো ছোঁয়া নেই। কুকুরের জন্য আলাদা কোনো কুকুরমাধ্যম বা কুকুরমিডিয়া নেই, যেখানে ডিজি নিয়োগের বিষয়ে ভাষণ প্রচার করা হবে। মোট কথা, এই বিষয় নিয়ে আমার কোনো জ্ঞান নেই। তাছাড়া ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতন ও এরপর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যেও শিক্ষার সংস্কার নিয়ে কোনো কমিশন গঠনের ঘোষণা নেই। সুতরাং আমার ভাষণ প্রচারের জায়গা যেমন নেই, তেমনি তা লিখে প্রকাশ ও তা পাঠান্তে শানে নুযুল বোঝার মতো বোদ্ধাও নেহাতই হাতে গোণা! আমার ভাষণ শুনে যদি ওএসডিনামার লেখক চরম বঞ্চিত ও নির্যাতিত প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তার চোখ খুলে যায় তাতে শিক্ষাখাতে ব্যাপক সংস্কার হলেও হতে পারে। গত প্রায় তিন দশকে ডিজি নিয়োগে সিনিয়র অধ্যাপক খোঁজার ইতিহাস ও বাস্তবতার একটা চিত্র পাবেন।    

কিন্তু, ওই শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা ছিলেন চরম ও পরম নাছোড়বান্দা। তারা সবিনয়ে অনুনয়-বিনুনয় করতে থাকলেন। আমি তখন জানতে চাইলাম, কেনো তারা কোনো শিক্ষাবিদকে দিয়ে ভাষণ দেওয়াচ্ছেন না, বা নিবন্ধ প্রকাশ করাচ্ছেন না। তাদের উত্তর শুনে অবাক হয়ে গেলাম। তাদেরকে বললাম, গত তিন দশকে এসএসবি করে ডিজি নিয়োগের সুনির্দিষ্ট তথ্য শিক্ষা ক্যাডারের কেউই রাখতে চান না। কারণ, শিক্ষা ক্যাডারে শুধু আবেদন জমা নিয়ে পিএসসি থেকে নিয়োগপত্র ধরিয়ে দেওয়া লোকও আছেন, আবার শুধু ১০০ নম্বরের বিশেষ ও ১০ শতাংশ কোটাধারীও আছেন। কোটার মধ্যে কুলীন ও অকুলীন ভাগও আছে। ১০ শতাংশ কোটায় নিয়োগের মূল লক্ষ্য শ্রেণিকক্ষে ভালো পাঠদানের উপযোগী শিক্ষক নিয়োগ। তারা কখনোই প্রশাসনিক পদে যাবেন না। কিস্তু তা মানা হচ্ছে না। হাজার কিংবা বারোশ’ নম্বরের প্রিলি, লিখিত ও ভাইভা উৎরানো ক্যাডারও আছেন। আবার বাইচান্স ক্যাডার মানে সরকারের ইচ্ছায় বেসরকারি কলেজ সরকারি হওয়ায় ক্যাডারভুক্ত হওয়া অধ্যাপকও আছেন। আবার সরকারি হাইস্কুলের শিক্ষক ও জেলা শিক্ষা অফিসারও শিক্ষা ক্যাডার। প্রকল্প থেকে আত্তীকৃতরাও শিক্ষা ক্যাডার। এসব ফ্যাঁকড়ার ফলে শিক্ষা ক্যাডারে অধ্যাপকদের সিনিয়রিটির নির্ভুল ও সর্বজনগ্রাহ্য তালিকা করারও সুযোগ প্রায় নেই।

নাছোড়বান্দা শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা আমাকে নিয়ে গেলেন শিক্ষা ভবনের ভেতরে মসজিদের কাছে। সেই মসজিদে ঢোকার সিঁড়ির পথে দাঁড় করিয়ে আমাকে দেখালেন- এই যে দেখুন, এখানেই আমাদের ক্যাডারের মোস্ট অব দ্যা সিনিয়রমোস্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ জুনাইদ প্রশাসন ক্যাডারের শিক্ষাসচিব শহীদুল আলমের জুতা পাহারা দিয়েছেন। সেদিন সচিব স্যার নামাজে ঢুকেছেন। অনেক দেশেই মসজিদ-মন্দির থেকে জুতা চুরি হয়। বাংলাদেশেও হয়। আর এই শিক্ষা ভবন ও হাইকোর্টের সামনের এলাকায় প্রচুর হিরোইনচি ঘুরঘুর করে। শিক্ষা ভবনে নামাজে এসে যদি শিক্ষাসচিবের জুতা চুরি হয় তাহলে চুক্তিভিত্তিক ডিজিগিরির কেল্লাফতে। তাই সচিবের জুতা পাহারা দেওয়া অধিকতরো যুক্তিযুক্ত মনে করেছেন মুরুব্বি অধ্যাপক ডিজি। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল থেকে ২০০৫-এর জানুয়ারি পর্যন্ত চুক্তিভিত্তিক ডিজি থাকার ফলে সচিব মহোদয়রা কলেজ ও স্কুলসহ শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন প্রকল্পে জুতার মাপে পা বানাতে পেরেছেন।  

এবার সেই শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা আমাকে নিয়ে গেলেন মাউশি অধিদপ্তরের ডিজির কক্ষে। আমি ঢুকতে চাইলাম না। আমি বললাম, আমি তো অ-ক্যাডার নেড়ি কুকুর। ক্যাডার ও অধ্যাপক ডিজির কক্ষে ঢুকে সেটাকে অপবিত্র করার অধিকার নেই আমার। কিন্তু অনেক জবরদস্তি করেই আমাকে নেওয়া হলো। প্রথমেই অনার বোর্ডের দিকে তাকাতে বললেন। দেখুন- ওই যে অধ্যাপক মোহাম্মদ জুনাইদ। বহু আগে অবসরে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ধরে নিয়ে এসে ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে চুক্তিভিত্তিক ডিজি করেছেন শিক্ষাসচিব শহীদুল আলম। মাঝখাতে কিছুদিন ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অতিরিক্ত দায়িত্বেও রাখা হয় জুনাইদকে। তাকে মোস্ট অব দ্যা সিনিয়র মোস্ট অধ্যাপক ডিজি বলা হয়।

আরো পড়ুন: কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে

এরপর আমাকে বলা হয় অনার বোর্ডের আরো একটু উপরের দিকে তাকাতে। জুন ১৯৯৬ থেকে ১৫ জুলাই ২০০১ সময়ে। এই সময়ে শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন প্রশাসন ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত আমলা এএসএইচ কে সাদেক। যিনি শিক্ষামন্ত্রী হয়েই ডাকলেন শিক্ষা অধিদপ্তরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির নেতা খুররম মোল্লাকে। শিক্ষা ক্যাডারের কয়েজন অধ্যাপকের নাম চাইলেন, যাদেরকে মাউশি ও নায়েমের ডিজি এবং বোর্ডগুলোতে চেয়ারম্যান পদে দেওয়া যায়।

কিন্তু, শিক্ষাখাতে সাদেকের ভরসা কেন মোল্লায়? শুনুন সেই কথা। মন্ত্রী হওয়ার কয়েকবছর আগে সাদেক ছিলেন অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের দাপুটে সচিব। একটা চিরকুট পেয়ে সাদেকের এলাকার কয়েকটা স্কুলের এমপিও এবং অন্যান্য কাজ অবিশ্বাস্য দ্রুততায় করে দিয়েছিলেন শিক্ষা ভবনের কর্মচারী সমিতির নেতা খুররম মোল্লা। সেই খুররম মোল্লার দেওয়া তালিকায় জাতির ভাগ্যে জুটলো মাউশি ডিজি ও একাধিক শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান! মেধাবী সিএসপি সাদেকদের প্রশাসনিক দক্ষতার যৎকিঞ্চিৎ নেপথ্য কাহিনী শুনে আমার মতো অ-ক্যাডার নেড়ি কুকুরের মুখেও হাসি পেলো।

প্রশাসন ক্যাডারের কাছে সাদেকের মন্ত্রিত্বের পাঁচ বছরের মূল্যায়নে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রায় সব ডিজিই ব্যর্থ। কারণ, সব ডিজিই শিক্ষা ক্যাডারের! তারা ওটার যোগ্য না বটে!                  

শহীদুল আলমের বানানো ডিজি জুনাইদকে প্রায় দুই বছর পদে রাখা হয়েছিলো। এর ভালো ফল পেয়েছিলেন প্রশাসন ক্যাডারের শিক্ষা সচিবরা। তারা চোখে আঙুল দিয়ে সিনিয়র শিক্ষা ক্যাডার ডিজির ব্যর্থতা ও অথর্বতা জাতিকে দেখাতে পেরেছিলেন!

২০০১ এর অক্টোবরে বিএনপি ও জামায়াত মিলে সরকার গঠন করে। 

বিএনপির মন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজের স্ত্রী তস্য জুনিয়র অধ্যাপক দিলারা হাফিজ ডিজি পদটা বাগিয়ে নেন ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে। কোনো সচিবের কিছু করণীয় ছিলো না। ওয়ান ইলেভেনের নয়দিন আগে মানে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের ২ জানুয়ারি দিলারা হাফিজ অবসরে যান। জুনাইদ ও দিলারার পুরো সময়ে একাধিক মৃত শিক্ষা ক্যাডারকে পদোন্নতি দেওয়া হয়! শিক্ষাসচিবের ধমকে আবার প্রজ্ঞাপনের সংশোধনী দেওয়া হয়।

ওয়ান-ইলেভেনের চারদিন আগে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উদেষ্টা অধ্যাপক ইয়াজ উদ্দিনের আত্মীয় এবং জুনিয়র অধ্যাপক মো. নাজিম উদ্দীনকে মহাপরিচালক করা হয়। সিনিয়রিটি তত্ত্বের প্রচারকরা চুপসে যান। 

এলো ওয়ান ইলেভেন। মানে ২০০৭ ও ২০০৮।  

তারপর তা প্রশাসন ক্যাডারের পোয়াবারো। আজন্মত্রুটিপূর্ণ তালিকার সিনিয়র অধ্যাপকদের অধিদপ্তর, নায়েম ও বোর্ডের শীর্ষ পদে পদায়ন করার ওহি নাজিল হলো। কিছুদিনের মধ্যে অতিরিক্ত সচিবদের খায়েশ হলো মাউশি ডিজির চার্জে থাকার। কয়েকজন সাংবাদিককে পেয়েও গেলেন পক্ষে। কিন্তু বাধ সাধলেন ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজের শিক্ষা ও সংসদ বিষয়ক সাংবাদিক সিদ্দিকুর রহমান খান। তিনি পরিস্কার করে বললেন, ডিজিটা শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপকদের সর্বোচ্চ পদ। ওখানে তারাই থাকুক। ওয়ান-ইলেভেনের দুই বছরে  (২০০৭-২০০৮) একমাত্র লড়াকু পত্রিকাটির সম্পাদক নূরুল কবীরও রিপোর্টারের সঙ্গে একমত হলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের খায়েশ ও পরিকল্পনা ভেস্তে গেলো।

২০০৭ এর অক্টোবরে ডিজি নাজিম উদ্দীনের অবসরের সঙ্গে সঙ্গে সিনিয়র অধ্যাপকদের সেই ত্রুটিপূর্ণ তালিকা ধরে খুলনার একটা কলেজ থেকে কে এম আওরঙ্গজেবকে মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি করা হয়। আর পাবনা থেকে এনে বায়তুন নাহারকে করা হয় নায়েমের ডিজি। দুইজনের পারফরমেন্সে মোটামুটি চোখে আঙুল দিয়ে জাতিকে দেখানো গেলো শিক্ষা ক্যাডারের কি অবস্থা! প্রশাসন ক্যাডারের মিশন সাকসেসফুল!  

২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ছয় জানুয়ারি শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় নুরুল ইসলাম নাহিদকে। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদকের পদ ছেড়ে একরাতে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া নাহিদ শিক্ষামন্ত্রী হয়ে শিক্ষা প্রশাসনের বড় পদে নিয়োগের জন্য খুঁজতে থাকেন সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন ও কমিউনিস্টদের। নাহিদের মতে, আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা পড়াশোনা জানেন না। তাই মাউশি ডিজি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ কয়েকটি পদে বসানো হয় সাবেক ছাত্র ইউনিয়নিস্টদের। এমন অবস্থা দেখে দুই বরিশাইল্যাকে নিয়ে আসেন আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। বরিশাইল্যা আত্তীকৃত অধ্যাপক মোস্তফা কামাল উদ্দীনকে অধিদপ্তরের কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক। আর নোমান-উর-রশীদকে করা হয় এনসিটিবির চেয়ারম্যান। মোস্তফা কামালকে মানতে শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের তীব্র আপত্তি। এক সপ্তাহের মধ্যে আদেশ বদল করা হয়। মোস্তফা কামালকে এনসিটিবির চেয়ারম্যান আর নোমানকে মাউশি অধিদপ্তরের কলেজ শাখার পরিচালক করা। নাহিদের পছন্দে হঠাৎ লিয়াকত নামের একজনকে ডিজি করা হলেও তিনি ফাইল দেখে ভয় পেয়ে অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে দুইমাসের মধ্যে চট্টগ্রামে ফিরে যান। কিছুদিন ডিজির অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকেন নোমান উর রশীদ। পুরোপুরি ডিজি হিসেবে নোমানের নতুন আদেশ হয় ২০০৯ এর পহেলা জুন।  ২০০৯  থেকে ২০১২  অব্দি ডিজি পদে ছিলেন নোমান-উর-রশীদ। কমিউনিস্ট থেকে আওয়ামী লীগে আত্তীকৃত নাহিদ শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলেন। মন খারাপ করে একদিন নিউ এইজের সিনিয়র রিপোর্টার সিদ্দিকুর রহমান খানকে বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী আমি, কিন্তু কে ডিজি, কে কোন বোর্ডের চেয়ারম্যান, কে সিনিয়র অধ্যাপক, কে জুনিয়র আমি কিছুই জানতে পারি না।’

নাহিদকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্বামী ও ভাই কোটায় ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে ডিজির চলতি দায়িত্ব বাগিয়ে নেন তস্য জুনিয়র অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন। প্রায় ৬০০ জনকে সুপারসিড করেন তিনি। অধ্যাপক পদে পদোন্নতির যোগ্যতা না থাকলেও ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে অধ্যাপক বনে যান ফাহিমা।  

২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্টে একটি বেঞ্চ ফাহিমা খাতুনের মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি পদে থাকা নিয়ে রুল দেয়। কোন কর্তৃত্ব বলে ফাহিমা খাতুন মহাপরিচালক পদে আছেন তা জানতে চেয়ে জ্যেষ্ঠ জনপ্রশাসন সচিব, জ্যেষ্ঠ শিক্ষা সচিব ও অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আট সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। ফাহিমার অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে তার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ৪ জুলাই পর্যন্ত মাউশি ডিজি পদে থেকে স্বাভাবিক অবসরে যান ফাহিমা। অথচ ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে অধ্যাপক পদে তার পদোন্নতি পাওয়াটাই ছিলো অবৈধ। আদালতে সেটা চ্যালেঞ্জ হলেও অবৈধভাবে নিযুক্ত হওয়া আইন প্রতিমন্ত্রী ও পরে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের সুবাদে পার পেয়ে যান।

আইনজীবী জেড আই খান পান্না ভাষায়, “বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) রিক্রুটমেন্ট রুলস-১৯৮১ এর ৭(১)(২) ও ৫(বি) অনুসারে অধ্যাপক হতে হলে বিভাগীয় পরীক্ষা ও জ্যেষ্ঠতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। ওই আইনের ৮(১) ধারায় এ বিষয়ে বিধিনিষেধ আছে। “ফাহিমা খাতুন পরীক্ষা ছাড়াই অধ্যাপক হন।”

সড়ক পরিবহন নেতা ও সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খানের ভাগ্নে পরিচয়ে তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ আত্তীকৃত অধ্যাপক আবু নাসেরও ডিজি প্রায় হয়েই গিয়েছিলেন। কিন্তু নাহিদের একান্ত চেষ্টায় এস এম ওয়াহিদুজ্জামান নামে পরিচিত শেখ মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামানকে ডিজি বানানো হয় শত শত সিনিয়র অধ্যাপককে ডিঙ্গিয়ে। 

২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে ১০ শতাংশ কোটায় অধ্যাপক হওয়া ১৪শ বিসিএস ব্যাচের সৈয়দ গোলাম ফারুককে ডিজি করেন নাহিদ ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে। শত শত সিনিয়রকে ডিঙ্গানো হয়। কিন্তু ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে নাহিদের শিক্ষামন্ত্রীত্বের বিদায় অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দীপুমনিসহ সবাই হাজির থাকলেও শুধু গোলামই গরহাজির! শিক্ষা ভবনে আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সুদর্শন সেই গোলামকে দীপু মনির ইচ্ছায় ও তদবিরে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য করা হয়। দীপু মনি চাইছিলেন গোলামকে আরো একবছর চুক্তিভিত্তিক ডিজি রাখার। না পেরে পিএসসিতে তরী ভেড়ান।  

২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে বাড়ৈ-রতন-শ্রীকান্ত সিন্ডিকেটের সদস্য শাহেদুল খবিরকে করা হয় মাউশি অধিদপ্তরের কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক। ১৪ ব্যাচের এই তস্য জুনিয়র কর্মকর্তা এসিআর লেখেন তার থেকে ৭/৮ ব্যাচ সিনিয়র অধ্যাপক ও অধ্যক্ষদের। 

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও শ্রেণিকক্ষে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য পাঠাদানে ও থিয়েটারে তুখোড় পারফরমার অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে ডিজি করা হয় ২০২২ এর ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা দিবসে। ভাগ্নের প্রতি মামার ভালোবাসার জয় হলেও ডিজি পদপ্রত্যাশী সিনিয়র অধ্যাপকদের পরাজয় হয়।

 উপস্থিত সর্বক্যাডার কর্মকর্তাবৃন্দ,

দুটো শোক বার্তা মনে করিয়ে আমার ভাষণ শেষ করবো।

এক. রকস্টার জেমসের বাবা ড. মো. মোজাম্মেল হক মাউশি অধিদপ্তরের প্রথম কোনো মহাপরিচালক যিনি পদে থেকেই মৃত্যুবরণ করেন। তার কর্মকাল ছিলো ১৯৯১-এর ৩০ এপ্রিল থেকে ১৯৯২-এর ১৬ ফেব্রুয়ারি।

দুই. ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র দশ মাস ডিজিগিরি করে অজানা রোগে মৃত্যুবরণ করেন অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান। তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

পুনশ্চ: কথিত সিনিয়র নয়, করিৎকর্মা ও বেশিদিন চাকরি আছে এমন অধ্যাপককে ডিজি করার মধ্যেই শিক্ষাখাত সংস্কারের চমক দেখুক জাতি।  

ধৈর্য্য ধরে শোনার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। 

ঘেউ ঘেউ 

তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কমিটি - dainik shiksha তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কমিটি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তির দাবি - dainik shiksha স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তির দাবি ঢাবিতে খেলোয়াড় কোটায় ভর্তি নির্দেশিকা প্রকাশ - dainik shiksha ঢাবিতে খেলোয়াড় কোটায় ভর্তি নির্দেশিকা প্রকাশ শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজকে ভাসানী নামকরণের দাবি - dainik shiksha শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজকে ভাসানী নামকরণের দাবি এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচির সমন্বয় সভা কাল - dainik shiksha এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচির সমন্বয় সভা কাল ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ২২ ডিসেম্বর - dainik shiksha ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ২২ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054261684417725