নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়াদের শেষ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির মনোনীত ব্যক্তি এবং প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের অনুমোদন ছাড়াই অনিয়মের মাধ্যমে ১২টি বিভাগে তড়িগড়ি করে বিভিন্ন পদে শিক্ষকসহ লোকবল নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। লোকবল নিয়োগ ছাড়াও ভিসির বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়কে জামায়াত-বিএনপির আস্তানায় রূপান্তর করারও অভিযোগ করা হয়।
জানা গেছে, রাষ্ট্রপতির মনোনীত ব্যক্তি এবং প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের অনুমোদন ছাড়াই নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১২টি বিভাগে তড়িগড়ি করে বিভিন্ন পদে শিক্ষকসহ লোকবল নিয়োগের বোর্ড বসিয়েছে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়াদের শেষ মুহূর্তে এমন তড়িগড়ি করে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষক ও কর্মকর্তারা।
বর্তমানে যে সব বিভাগে নিয়োগ হচ্ছে তার মধ্যে পরিসংখ্যান, বিএমএস, সমাজকর্ম, শিক্ষা বিভাগ, প্রাণীবিদ্যা, আইন বিভাগ, সমাজ বিজ্ঞান, ইইই, শিক্ষা প্রশাসন এবং ইনস্টিটিউট ২টি হলো আইআইটি ও আইআইএস। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সদস্য, শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রফেসর ড. মো. দিদার-উল-আলম নোবিপ্রবির উপাচার্য হিসেবে ২০১৯ সালের ১২ জুন যোগদান করেন। সে অনুযায়ী আগামী ১৩ জুন উপাচার্য হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। তার মেয়াদের শেষ মুহূর্তে বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগ দেয়া প্রায় অবৈধ। কোনো প্রকার প্ল্যানিং কমিটির মিটিং ও প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের মতামত ছাড়া এবং রাষ্ট্রপতির মনোনীত ব্যক্তি ছাড়াই ইতোমধ্যে ১০টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউটে লোকবল নিয়োগের বোর্ড বসানো হয়েছে। যা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১ এর প্রথম সংবিধির ৪ (৯) বহির্ভূত।
সূত্র জানায়, বিভাগগুলোর সঙ্গে আলোচনা এবং রাষ্ট্রপতির মনোনীত ব্যক্তি ছাড়া মনগড়া লোকজনকে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সাজিয়ে গত ৩০ মার্চ লোকবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। বিধি অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ থেকে আবেদন করার জন্য অন্তত ১৫ দিন সময় দিতে হয় প্রার্থীদের। কিন্তু ৩০ মার্চ প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রার্থীরা সময় পেয়েছে ১০ দিন।
উপাচার্যের মেয়াদ শেষের মাস খানেক আগে আংশিক বাছাই বোর্ড দিয়ে একাধিক বিভাগে শিক্ষকসহ লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন বিভিন্ন বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সদস্যরা। তারা বলছেন, কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে একের পর এক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া সরাসরি আইন লঙ্ঘন ও বিধি বহির্ভূত।
ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইআইটি) প্ল্যানিং কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নিয়ম অনুযায়ী কোনো ইনস্টিটিউট কিংবা বিভাগের লোকবল নিয়োগ দেয়ার আগে স্ব স্ব বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির মিটিং হওয়ার কথা। কিন্তু কোনো প্রকার মিটিং না ডেকে বর্তমান উপাচার্য ৩০ মার্চ তড়িগড়ি করে লোকবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। যার মেয়াদ শেষ হয় ১২ এপ্রিল। পরবর্তী সময়ে প্ল্যানিং কমিটির দ্বিতীয় মিটিং ডাকা হয় ১৩ এপ্রিল।
সেখানে সিদ্ধান্ত হয় বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আইআইটিতে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কম্পিউটার সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে পাস করা প্রার্থীদের যোগ্য বিবেচনা করা হবে। কিন্তু দেখা গেছে বিজ্ঞপ্তির শর্ত অমান্য করে সেখানে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রার্থীদের নেয়া হয়েছে। সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন, বিধি কিংবা অধ্যাদেশ কিছুই মানা হচ্ছে না। স্বেচ্ছাচারিতার মধ্যদিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়। উপাচার্য দিদার-উল-আলম সম্পূর্ণরূপে ট্রেজাজার প্রফেসর ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুরের উপর ভর করে চলছেন। পরিসংখ্যান বিভাগের একজন শিক্ষক জানান, তিনি তার বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির একজন সদস্য। অথচ তিনি জানেনই না যে, তার বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ হবে। যখন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আসল তখনই তিনি জানতে পারেন পরিসংখ্যান বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক একজন নিয়োগ দেয়া হবে। যদি সহযোগী অধ্যাপক না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে প্রভাষক নিয়োগ দেবেন। তার ভাষ্যমতে, প্ল্যানিং কমিটির বৈঠক ছাড়া এভাবে নিয়োগ অবৈধ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি কর্মচারী নিয়োগে ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই শুধুমাত্র মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে নিয়োগ পক্রিয়া চলমান রয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. দিদার-উল-আলমকে বুধবার বিকাল থেকে একাধিকবার ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে থাকা উপউপাচার্য ড. মোহাম্মদ আবদুল বাকীকে ফোন দিলে তিনিও ফোন ধরেননি।
যার কারণে তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এদিকে, সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বলেছেন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু দুর্নীতিবাজ আওয়ামীপন্থির সহযোগিতায় ভিসি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে জামায়াত-বিএনপির আস্তানায় রূপান্তরিত করেছেন। জেলার শীর্ষ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে তার এমন মন্তব্যে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।