আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া শিক্ষকরা তাদের পদ ফিরে চান। একই সঙ্গে চান কর্মস্থলে নিরাপত্তা।(১৪ অক্টোবর) সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পদ-বঞ্চিত প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকজোট আয়োজিত মানববন্ধনে তারা এ দাবি জানান।
তারা বলেন, গত দুই মাসেরও অধিক সময় ধরে বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই হাজার প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষককে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। এদের কাউকে অপসারণ করা হয়েছে। কাউকে বরখাস্ত বা বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়েছৈ। কাউকে আবার অবাঞ্ছিতে ঘোষণা করা হয়েছে কর্মস্থলে। এসব বিতাড়িত অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষকদের আগের পদে বহালের জন্য দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করা হোক। এজন্য আমরা শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে জোর দাবি জানাই।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া পদবঞ্চিত প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকজোটের আহবায়ক আনোয়ার ইসলাম তালুকদার বলেন, যেখানে শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর সেখানে আজ আমরা নিগৃহীত, নির্যাতিত। দেশের শিশুদের আগামী দিনের সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ব্রত নিয়ে সততা, নিষ্ঠা ও নৈতিকতার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে স্বার্থলোভী লোকদের ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হয়েছি আমরা। স্বার্থান্বেষীরা এই সংকটময় পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে, দুষ্কৃতকারীদের সঙ্গে নিয়ে এমন নিষ্ঠুর নির্মম ঘটনা ঘটিয়েছে, যা অস্বাভাবিক, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত।
তিনি আরো বলেন, সারা দেশে এখন পর্যন্ত ২ হাজারের বেশি শিক্ষককে জোরপূর্বক পদত্যাগ করিয়েছেন। এই অনৈতিক, অন্যায় ও মবজাস্টিসের মতো বর্বরতার কবলে পড়েছি আমরা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বল্প বেতনে নিয়োজিত শিক্ষকেরা। ফলে কেউ আহত হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। কেউ চাকরি হারিয়ে, পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। কেউবা ঘর-বাড়ি ছেড়ে দূর-দূরান্তে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এই হয়রানি ও বিপর্যয়কর অবস্থা থেকে আমরা রক্ষা পেতে চাই, নিরাপদে বাঁচতে চাই।
অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষকরা স্বপদে ফিরতে পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছেন। এগুলো হলো- ১. পদবঞ্চিত প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকদের এমপিও থেকে নাম কর্তন না করে বেতন-ভাতাদি চালু রাখার ব্যবস্থা করা ২. পদ-বঞ্চিত প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগ, অপসারণ, বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক ছুটি বাতিল ঘোষণা করা ৩. সসম্মানে স্বপদে বহাল করে কর্মস্থলের নিরাপত্তা বিধান করা ৪. অনতিবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বার্থলোভী ও শৃঙ্খলাভঙ্গকারীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা এবং ৫. পদ-বঞ্চিত প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকদের সমমানের এমপিওভুক্ত স্কুলে শূন্যপদে বদলির ব্যবস্থা করা।
মানববন্ধনে মুরাদনগর নুরুন্নাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সৈয়দ হাসিনা আক্তার, গুলশানের আবুল খালেক মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আয়শা আক্তার, দড়গ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুল ইসলাম, গোলাম নদী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের আলকাচ উদ্দিন, প্রধান শিক্ষক মনি আক্তার মিলিসহ প্রায় ৫০ জন অধ্যক্ষ ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।