দৈনিকশিক্ষাডটকম, রাজশাহী : পঞ্চম শ্রেণি পাস করেও ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের পৌনে দুইশ শিক্ষর্থীর। চর ইউনিয়নটি মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছন্ন ইউনিয়ন। ফলে পদ্মা নদী পাড় হয়ে লোকালয়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা অনেকটাই দুষ্কর এই চরের শিক্ষার্থীদের। এদিকে অভিভাবকরা সন্তানদের লেখাপড়া করানোর ইচ্ছে থাকলেও স্কুলে ভর্তি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।
নয়টি প্রাথমিক ও একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় নিয়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন। ইউনিয়নটিতে ৮টি প্রাথমিক, একটি জুনিয়র প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। জুনিয়র প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা হয়। এ বছর নয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে ৩৪১ জন শিক্ষার্থী। আর ইউনিয়নজুড়ে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় হওয়ায় সেখানে ভর্তি হওয়াটা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছে সোনার হরিণ পাওয়ার মতো।
শিক্ষকরা বলছেন, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করার অনুমতি নেই। তাই চাইলেও বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা সম্ভব না। ফলে অনেক শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
গোদাগাড়ী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলার পদ্মা চরের চর আষাড়িয়াদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে ৫৫ জন শিক্ষার্থী। এ ছাড়া চর নওশেরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে ৪১ জন। এই স্কুলটি জুনিয়র প্রাথমিক বিদ্যালয়। অপরদিকে, চর হেমন্তনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে ৩৬ জন, দিয়ার আষাড়িয়াদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে ৪৪ জন, চর আষাড়িয়াদহ নতুন গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে ৫০ জন, চর বোয়ালমারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে ২২ জন, দিয়াড় মানিকচক পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে ১৮ জন, দিয়াড় মানিকচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে ৩২ জন, চর আমতালা খাষমহল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৪৩ জন শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছেন।
জানা গেছে, ইউনিয়নজুড়ে একটি জুনিয়র প্রাথমিক বিদ্যালয়। যে বিদ্যালয়টি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। এই স্কুলে এ বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি হবে ৫৫ জন। যদিও স্কুলটি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছেন ৪১ জন শিক্ষার্থী। স্কুলটি ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য অন্য স্কুলে ১৪ জন শিক্ষার্থী নিতে পারবে। এ ছাড়া চার আষাড়িয়াদহ কানাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির দুটি শাখায় ৫৫ জনকে ১১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটি তাদের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করে বইও দিয়েছে। তাহলে সবমিলিয়ে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটিতে ১৬৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। তবে ভর্তি হতে বাকি ১৭৬ জন পঞ্চম শ্রেণি পাস করা শিক্ষার্থী ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারছেন না।
যদিও গত বছরের শুরুতে চার আষাড়িয়াদহ কানাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ দুই শাখায় ২০৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু এ বছর বিদ্যালয়টিতে ১১০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা যায়নি। তবে ভর্তির আবেদন করেছিল ১৮৪ জন শিক্ষার্থী। তবে লটারিতে বাদ পড়েছে ৭৪ জন শিক্ষার্থী।
গোদাগাড়ী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আল মামুন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শুধু চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ে ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। এসব প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৩৪১ জন শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে।
রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, পঞ্চম শ্রেণির সব শিক্ষার্থী পাস করেছে। সেই হিসেবে এ বছর রাজশাহী জেলায় ৭৪ হাজার ৯৪১ জন শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে। তারা ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হবে। রাজশাহীর ১ হাজার ৫৭টি সরকারি ও ৮৭৮টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করা হয়েছে।
রাজশাহী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না। তবে পদ্মার চর আষাড়িয়াদহতে ছাড় দেয়ার কথা রয়েছে। তারা নিজ ব্যবস্থাপনায় ক্লাসের শাখা বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিতে পারবেন।