ঢাকার কেরানীগঞ্জের নয়াবাজার উচ্চবিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের জমি বিক্রির চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন। তাঁরা জড়িত ব্যক্তিদের ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
গতকাল শুক্রবার সকালে কেরানীগঞ্জের শাক্তা ইউনিয়নের আটি-খোলামোড়া সড়কের নুরন্ডির মোড় এলাকায় এ মানববন্ধন হয়। পরে বামনশুর, নুরন্ডি, নয়াবাজার, আটি পাঁচদোনা, নবাবচর এলাকার কয়েক শ এলাকাবাসী বিদ্যালয়ের জমি রক্ষা সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় তাঁরা জমি রক্ষার ও বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। মিছিলটি আটি পাঁচদোনা এলাকা থেকে শুরু হয়ে নুরন্ডি মোড় এলাকা প্রদক্ষিণ করে খোলামোড়া এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বামনশুর এলাকার বাসিন্দা এম এ জিন্নাহ ও রোজিনা আক্তার নয়াবাজার উচ্চবিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ করা ২১০ শতাংশ জায়গার মধ্যে ২৩ শতাংশ জায়গা নিজেদের বলে দাবি করেন। ২০০৭ সালে এ বিষয়ে রোজিনা আক্তার বাদী হয়ে ঢাকার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি নালিশি মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলা খারিজ করে দেন। পরে ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট রোজিনা আক্তার ঢাকার অতিরিক্ত জেলা জজ ষষ্ঠ আদালতে আপিল করেন। এ আদালতের বিচারক ২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল আপিল খারিজ করে আগের রায় বহাল রাখেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আদালতে সুবিধা করতে না পেরে রোজিনা আক্তার বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এম এ গফুর, পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. সালাউদ্দিন ও মো. কামাল উদ্দিনসহ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর সঙ্গে আঁতাত করেন। পরে জাল দলিল বানিয়ে ২৩ শতাংশ জমি জুয়েল মিয়ার কাছে বিক্রির চেষ্টা করেন রোজিনা। বায়না সূত্রে মালিকানা দাবি করে ওই জমিতে একটা সাইনবোর্ড টানান জুয়েল। স্থানীয় লোকজন সেটি উপড়ে ফেলেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আখের হোসেন বলেন, ২০ বছর ধরে এম এ গফুর সভাপতি, সদস্য মো. সালাউদ্দিন ও কামাল উদ্দিন ওরফে কামাল সরকারের নয়াবাজার উচ্চবিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁরাসহ বেশ কয়েকজন মিলে পরস্পর যোগসাজশ করে বিদ্যালয়ের জমির জাল দলিল বানিয়ে দখল করার পাঁয়তারা করছে। এ বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বিদ্যালয়ের জমিদাতার ছোট ভাই সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৬৩ সালে তাঁর বড় ভাই এমদাদুল হক ওরফে তাজুল বিদ্যালয়ের নামে ২১০ শতাংশ জায়গা দান করে গেছেন।
সেই জমি দখল করার জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি গফুর, সদস্য সালাউদ্দিন ও কামাল ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে সেখান থেকে ২৩ শতাংশ জায়গা বিক্রি করার পাঁয়তারা করছে। ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে জমি জুয়েলের কাছে বিক্রির চেষ্টা করছে। সাইফুল বলেন, ‘আমরা এত বড় অন্যায় ও পুকুরচুরি করতে দিব না। এ ঘটনায় আমরা দোষীদের শাস্তি দাবি করছি।’মানববন্ধন শেষে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন স্থানীয় এম এ জিন্নাহ, আনোয়ার হোসেন, জসিম উদ্দিন, ফারুক আহমেদ ও আবুল কাশেম প্রমুখ। কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের জায়গা দখল ও অনিয়মের বিষয়টি শুনেছি। বিদ্যালয় ও এর জমির বিষয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে যাঁরা জড়িত, তদন্ত সাপেক্ষে তাঁদের বিরুদ্ধে বাবস্থা নেওয়া উচিত।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নয়াবাজার উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হানিফা কিছু বলতে রাজি হননি। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এম এ গফুরের দাবি, মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা ছিল না। কিছু ভূমিদস্যু মানববন্ধন করেছে। সেখানে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি বিদ্যালয়ের জমি বিক্রি করিনি। দলিল যাঁর জমি তাঁর। যাঁর জমি সে–ই বিক্রি করেছে।’
বিষয়টি নিয়ে অবগত আছেন বলে জানান কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সল বিন করিম। তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু দিন আগে কয়েকজন এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের অভিভাবক আমার কার্যালয়ে এসেছিলেন। তাঁরা নয়াবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও বিদ্যালয়ের জায়গা দখলের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। বিদ্যালয়ের জায়গা কাউকে দখল করতে দেওয়া যাবে না। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’