দেশের খ্যাতনামা পর্বতারোহী শায়লা বিথী ঢাকার ধানমন্ডিতে ফুটওভারব্রিজ পার হওয়ার সময় ‘অতর্কিত হামলার’ শিকার হয়েছেন। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ হাই স্কুলের সামনের ফুটওভারব্রিজে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর বিথী মোহাম্মদপুর থানায় গেলেও ঘটনাস্থল শেরেবাংলা নগর থানার আওতায় পড়ায় তাকে সেখানে পাঠানো হয়। অভিযোগ শুনে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গেছেন।
বিথীর সঙ্গে থানায় যাওয়া শান্ত শান বলেন, আমরা পুলিশের সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। আশে-পাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই করে দেখতে পুলিশ আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি জানান, থানা পুলিশ এখনও লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করেনি। মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাচ্ছে।
ঘটনার বর্ণনায় শান্ত বলেন, ওভারব্রজি থেকে নামার সময় আচমকা বিথীর চুলির মুঠি টেনে ধরে। হামলাকারীরা তাকে টেনে উপরের দিকে তুলতে চেয়েছিল, কিন্তু বিথী বসে পড়েন। জোর-জবরদস্তির একপর্যায়ে বিথী চিৎকার করতে থাকে। ফুটওভারব্রিজের নিচেই কয়েকজন রাস্তায় কাজ করছিলেন।
একপর্যায়ে হামলাকারীরা বিথীকে ছেড়ে দিয়ে উপরের দিকে উঠে দৌড়ে পালিয়ে যায়। বিথী উঠে দাড়িয়ে পেছনে তাকিয়ে কাউকে দেখেননি। তবে হামলাকারী ২-৩ জন থাকতে পারে বলে ধারনা করছি আমরা।
এ বিষয়ে শেরেবাংলা নগর থানার ওসি মোজাম্মেল হক বলেন, “ফুটওভার ব্রিজ থেকে নামার সময় কে বা কারা তার চুলের মুঠি টেনে ধরেছে। তবে তিনি হামলাকারীদের দেখেননি।
তিনি সিঁড়িতে পরে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। আমরা এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে একটা টিম পাঠিয়েছি। এ বিষয়ে যথাযথ আইননুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে ফেইসবুক পোস্টে বিথীর স্বামী তৈমুর ফারুর তুষার বলেন, পর্বতারোহী শায়লা বিথী ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কের ওভারব্রিজ পার হচ্ছিল। পেছন থেকে হামলাকারীরা এসে চুলের মুঠি ধরে বেধড়ক পেটানো শুরু করে। হামলায় তার ঠোঁট ফেটে গেছে। সারা শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন।
কারা কী উদ্দেশ্যে এ হামলা করেছে তা পুলিশকে বের করতে হবে। দুপুর ২টার পরে দিনের আলোতে এ হামলার দৃশ্য নিশ্চয়ই সিসিটিভিতে রেকর্ড আছে। ফলে অপরাধীদের শনাক্ত করা কঠিন হওয়ার কথা না। শায়লা বিথী অভিযোগ জানাতে মোহাম্মদপুর থানায় গেছে।
শায়লা বিথী সর্বশেষ ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে হিমালয়ের আইল্যান্ড পর্বতচূড়া জয় করেন। তিনি ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টিনিয়ারিং থেকে পর্বতারোহণের মৌলিক প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেন।
প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে তিব্বতের লাকপারি (৭ হাজার ৪৫ মিটার) পর্বতচূড়া জয় করেন। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে হিমালয়ের দুর্গশ তাশি লাপচা (৫ হাজার ৭৫৫ মিটার) গিরিপথ পার হন।
বিথী প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে হিমালয়ের বিখ্যাত থ্রি-পাস অতিক্রম করেন। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে নেপালের মাউন্ট কেয়াজুরির বেসক্যাম্প (১৫ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতা) ট্রেকিং করেন।
২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে সফলভাবে নেপালের মেরা পর্বতের চূড়ায় (৬ হাজার ৪৭৪মিটার) ওঠেন বিথী। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে নেপালের থ্রংলা পাস (৫ হাজার ৪১৬ মিটার) অতিক্রম করেন। একই বছরের অক্টোবরে তিনি প্রথম বাংলাদেশি দলের হয়ে মানাসলু সার্কিট (৫ হাজার ১০৬ মিটার) সম্পন্ন করেন।