ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নবীন ছাত্রী ফুলপরীকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। সোমবার (২১ আগস্ট) জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিকেল ৪টায় ভিসির বাসভবনে সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে বিকেল পাঁচটায় রেজিস্ট্রার ভারপ্রাপ্ত এইচ এম আলী হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক জড়িত পাঁচ ছাত্রীকে আজীবন বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
এর আগে গত ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে আচারণবিধির দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৮ ধারা অনুযায়ী জড়িতদের এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছিল কর্তৃপক্ষ। পরে গত ২৬ জুলাই এই শাস্তি ‘যথোপযুক্ত নয়’ উল্লেখ করে পুনরায় শাস্তি নির্ধারণে ভিসিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আগামী ২৩ আগস্ট আদালতে এসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে বলা হয়।
হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আজ সোমবার জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডাকে কর্তৃপক্ষ। ভিসির নেতৃত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জড়িতদের আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ফুলপরীকে নির্যাতনের ঘটনায় রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে আইন রয়েছে তাতে সর্বোচ্চ শাস্তি স্থায়ী বহিষ্কারের বিধান রয়েছে। বিচারপতি কোড অব কন্ডাক্টের বিধি প্রথম ভাগের ৪, ৫, ৭ এবং দ্বিতীয় ভাগের ৮ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ১১ ও ১২ই ফেব্রুয়ারি দুই দফায় দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর র্যাগিং, শারীরিকভাবে নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ উঠে। ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুন ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা তাঁকে নির্যাতন করেন বলে জানায় ভুক্তভোগী। ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৫ই ফেব্রুয়ারি পৃথকভাবে তিনটি তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট হল কর্তৃপক্ষ ও শাখা ছাত্রলীগ। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট হলে হাইকোর্টের নির্দেশেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন।
এ ঘটনায় গত ৪ মার্চ হাইকোর্টের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শৃঙখলা কমিটির সভায় অন্তরাসহ পাঁচ ছাত্রীকে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছিল কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও তাদের সকলকে দল থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর গত ১২ই জুন অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটি। একইদিনে ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুনকেও ডাকা হয়। এসব বিবেচনা শেষে গত ১৫ জুলাই ছাত্র-শৃঙখলা কমিটির চূড়ান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত পাঁচজনকে এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ।