ভুয়া জন্মদিন পালন, যুদ্ধাপরাধীদের মদদ, মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিসহ আদালতে করা পাঁচ মামলায় খালাস পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) মামলার ধার্য তারিখে মামলার বাদী আদালতে হাজির না হওয়ায় মামলাগুলো খারিজ করে আসামিদের খালাস প্রদান করেন একাধিক ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার খালাসের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মামলার শুনানির তারিখে বাদী আদালতে না আসায় ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হক ও তোফাজ্জল হোসেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলা খারিজ করে আসামিদের খালাস প্রদান করেন।
খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, মামলার বাদী একাধিক ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় এ খারিজ আদেশ দিয়েছেন আদালত।
ভুয়া জন্মদিন পালন:
ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ আগস্ট ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম এ মামলা দায়ের করেন। পরে ওই বছর ২৭ নভেম্বর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।
মামলায় বলা হয়, বিভিন্ন মাধ্যমে খালেদা জিয়ার ৫টি জন্মদিন পাওয়া গেলেও কোথাও ১৫ আগস্ট জন্মদিন পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় তিনি ৫টি জন্মদিনের একটিও পালন না করে ১৯৯৬ সাল থেকে ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকীর জাতীয় শোক দিবসে আনন্দ উৎসব করে জন্মদিন পালন করে আসছেন। শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য তিনি ওইদিন জন্মদিন পালন করেন।
যুদ্ধাপরাধীদের মদদ:
যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দেওয়ার অভিযোগে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩ নভেম্বর বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী মামলা দায়ের করেন। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ ফেব্রুয়ারী তেজগাঁও থানার ওসি (তদন্ত) এবিএম মশিউর রহমান খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই বছর ১২ অক্টোবর সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।
মামলায় বলা হয়, ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর কলঙ্কিত মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বর সিপাহী বিপ্লবের মাধ্যমে সামরিক সরকারের দায়িত্ব দখল করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছেন। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে ক্ষমতা গ্রহণ করে স্বাধীনতা বিরোধী আলবদর রাজাকারদের হাতে মন্ত্রীত্ব তুলে দেয়। যার মাধ্যমে স্বীকৃত স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়ীতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে দেশের মানচিত্র এবং জাতীয় পতাকা মানহানি ঘটিয়েছেন।
শেখ মুজিবকে নিয়ে কটুক্তি সংক্রান্ত মানহানী মামলা:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিয়ে কটুক্তির অভিযোগের ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি মানহানির মামলাটি করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতা চান নাই। তিনি চেয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীত্ব। জেনারেল জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ায় এদেশের জনগণ যুদ্ধে নেমে ছিল। খালেদা জিয়ার উক্ত বক্তব্য মানহানিকর উল্লেখ করে এ মামলা দায়ের করা হয়।
মামলায় অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জুলাই রাজধানীর শাহবাগ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. জাফর আলী বিশ্বাস সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি:
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে মানহানিকর মন্তব্যের অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিশন বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, তিনি তো (বঙ্গবন্ধু) বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি, তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। শহীদ প্রেসিসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ‘আজকে বলা হয়, এতো শহীদ হয়েছে, এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে।’
হত্যার হুমকি:
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মানহানি ও হত্যার হুমকির অভিযোগ ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩ নভেম্বর বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী এ মামলা দায়ের করেন।
মামলায় বলা হয়, ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর কলঙ্কিত মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বর সিপাহী বিপ্লবের মাধ্যমে সামরিক সরকারের দায়িত্ব দখল করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছেন। ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসলে তাকে হত্যার হুমকি তার বাবার বাড়ীতে প্রবেশ করতে দেন নাই।