যুক্তরাজ্যে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় ধর্মঘট পালিত হলো গতকাল বুধবার। প্রায় ৫ লাখের বেশি বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বেসরকারি কর্মচারী ও রেলওয়ের কর্মচারীরা সমন্বিতভাবে ধর্মঘট পালন করেছে। ধর্মঘটের ফলে পুরো দেশজুড়ে অনেকটা স্থবিরতা দেখা দেয়।
রয়টার্স জানায়, দেশজুড়ে শিক্ষকদের এই ওয়াকআউটের ফলে স্কুলগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়; বেশির ভাগ রেল পরিষেবা বন্ধ রাখা হয় এবং সীমান্ত এলাকায় সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীকে সতর্ক প্রহরায় রাখা হয়েছে।
বুধবার প্রাথমিকভাবে তিন লাখ শিক্ষক ধর্মঘট করবেন বলে ধারণা করা হলেও পরবর্তী সময়ে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ ৫ লাখের বেশি মানুষ কর্মস্থল থেকে এই ওয়াকআউটে অংশ নেন। গত এক দশকের মধ্যে শিক্ষক ধর্মঘটের এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যা।
ন্যাশনাল এডুকেশন ইউনিয়নের জেনারেল সেক্রেটারি মেরি বোস্টেড রয়টার্সকে বলেছেন, ‘ইউনিয়নের শিক্ষকরা মনে করেন, তাদের ধর্মঘট করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কারণ বেতন কমানোর ফলে প্রচুর সংখ্যক মানুষ এই পেশা ছেড়ে যাচ্ছেন। ফলে যারা থেকে যাচ্ছেন, তাদের জন্য শিক্ষকতা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেক শিক্ষকই আজকের ধর্মঘটে থাকতে চাননি। কিন্তু তারা বলছেন, খুব অনিচ্ছা সত্ত্বেও চলতে থাকা এই পরিবর্তন ঠেকানো জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
তবে ধর্মঘটের বিপরীতে শিক্ষামন্ত্রী গিলিয়ান কিগান সরকারের অবস্থান অনড় বলে জানিয়েছেন। তিনি জানান, শিক্ষকদের বক্তব্য অনুযায়ী মজুরি বাড়িয়ে দেয়ার দাবি মেনে নেয়া মানে, মুদ্রাস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে তোলা।
যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক মুদ্রাস্ফীতি গত চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে উঠেছে। গত কয়েক মাস ধরেই স্বাস্থ্য, পরিবহন কর্মী, ওয়্যারহাউস কর্মচারী এবং ডাক বিভাগের কর্মীসহ বিভিন্ন সেক্টরে ধর্মঘটের ঢেউ উঠেছে।
শিক্ষামন্ত্রী বিবিসিকে বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমরা যা করতে পারি, তা হলো শ্রমশক্তির একটি অংশের বেতন বৃদ্ধি করে দিয়ে মুদ্রাস্ফীতিকে আরও খারাপের দিকে ঠেলে দিতে। কিন্তু এই পদক্ষেপ নেয়া অর্থনৈতিকভাবে কখনোই বুদ্ধিমানের কাজ নয়।’
কনসালটেন্সি ফার্ম সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর)-এর অনুমান অনুযায়ী গত আট মাস ধরে বিভিন্ন সেক্টরের মানুষ ধর্মঘট চালিয়ে আসলেও, সামগ্রিক বাণিজ্যিক খাতে সেটি বড় ধরনের কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।
তবে শিক্ষকদের এই ধর্মঘট প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সরকারের ওপর একটি রাজনৈতিক প্রভাব ফেলবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। কারণ কনজারভেটিভ পার্টির আগের সরকারপ্রধানরাও এই ধর্মঘটগুলোকে নেতিবাচকভাবে সামাল দিয়েছে। ফলে ব্রিটিশ জনগণ মনে করে, ক্ষমতাসীন এই দলের ভোট ও সমীক্ষা বিরোধী লেবার পার্টির চেয়ে তাদের প্রায় ২৫ শতাংশ পয়েন্টে পিছিয়ে দিয়েছে।
শিক্ষক ও বেসরকারি কর্মচারী ছাড়াও গতকাল বুধবার দেশজুড়ে এই ধর্মঘটে অংশ নিয়েছে ১২০টিরও বেশি সরকারি দপ্তরের এক লাখ সরকারি কর্মচারী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার প্রভাষক। এর মাঝে কয়েকটি সেক্টরের কর্মীরা ধর্মঘট রোধে নতুন আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আজও সমাবেশের পরিকল্পনা নিয়েছে।
এ ছাড়া চলতি সপ্তাহে অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। অন্যদিকে আগামী সপ্তাহে নার্স, অ্যাম্বুলেন্স স্টাফ, প্যারামেডিকস, জরুরি ফোনকল গ্রহীতা এবং অন্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা আরও একবার ওয়াকআউটের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। মূলত বেতনবৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই বিভিন্ন সেক্টরের কর্মীদের এই ধর্মঘট। কিন্তু সরকার এই ধর্মঘটে বিচলিত না হয়ে উল্টো মূদ্রাস্ফীতি রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেই সচেষ্ট বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।