পাটকাঠি থেকে প্রাপ্ত সাবমাইক্রন কার্বন কণা ব্যবহার করে ইঙ্কজেট অথবা ছাপার কালির একটি জল-ভিত্তিক ফর্মুলেশন উদ্ভাবন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক শিক্ষার্থী ও তরুণ রসায়ন বিজ্ঞানী ড. মো. আব্দুল আজিজ ও একদল তরুণ গবেষক। সম্প্রতি কেমেস্ট্রি অ্যান এশিয়ান জার্নালে সম্পর্কিত একটি গবেষণাপত্রে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়।
তরুণ বিজ্ঞানী আব্দুল আজিজের দাবি, উদ্ভাবনটি উল্লেখযোগ্যভাবে মুদ্রণ শিল্প থেকে নির্গত পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গ্যাস কমাতে পারবে এবং মুদ্রণের কালো কালির আমদানি কমিয়ে সর্বোচ্চ অর্থ সাশ্রয় করতে পারবে। উদ্ভাবিত এ কালি সস্তা এবং উন্নতমানের, যা বাজারে থাকা ঐতিহ্যগত কার্বন কালো ইঙ্কজেট কালির চেয়ে অনেকটা সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব এবং বিকল্প হিসেবে ব্যবহারযোগ্য। এতে বায়োমাস, পাট কাঠিগুলোকে পাইরোলাইজ করার জন্য একটি কাস্টমাইজড পাইলট ফার্নেস ব্যবহার করা হয়েছে, যা জ্বালানি হিসেবে উৎপন্ন গ্যাসগুলোকে পুনর্ব্যবহৃত করে।
তিনি বলেন, সাবমাইক্রন কার্বন কণা তৈরির জন্য প্রাপ্ত কার্বনকে আরো বল-মিল করা হয়েছে। এ কণাগুলো জলভিত্তিক ইঙ্কজেট কালি তৈরি করতে বায়োকম্প্যাটিবল ইথিলিন গ্লাইকোল এবং আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহলের জলীয় দ্রবণে দ্রবীভূত হয়। ক্যানন প্রিন্টার (PIXMA; মডেল: G3420) ব্যবহার করে এ-ফোর আকারের কাগজের অনেক পৃষ্ঠা মুদ্রণ করে উন্নত কালি পরীক্ষা করে বাণিজ্যিক ইঙ্কজেট কালো কালির মতো কার্যকারিতা খুঁজে পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া তার নেতৃত্বে পাটকাঠি থেকে অত্যন্ত স্থিতিশীল এবং ইলেক্ট্রোকেমিক্যালি সক্রিয় ত্রি-মাত্রিক আন্তঃসংযুক্ত গ্রাফিন ফ্রেমওয়ার্ক (3DIGF) তৈরি করার জন্য একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। যা কেমিস্ট্রি অ্যান এশিয়ান জার্নাল প্রকাশিত হয়েছে। যাতে সবুজ রসায়ন ব্যবহার করে গ্রাফিন সংশ্লেষণের জন্য একটি সহজ এবং ব্যয়-কার্যকর পদ্ধতি প্রদর্শন করে। এর বাইরে তিনি পাটকাঠি থেকে উচ্চমানের অ্যান্টিকোরোসিভ আবরণেরও উদ্ভাবন করেন। সম্প্রতি কেমেস্ট্রি-এন এশিয়ান জার্নালে এ সম্পর্কিত একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। যাতে কালি ছাপার কার্বন কণার আরও টেকসই বিকল্প প্রস্তাব করা হয়।
প্রসঙ্গত, ড. মো. আব্দুল আজিজের বাড়ি যশোরের কেশবপুর উপজেলার হাসানপুর ইউনিয়নের মোমিনপুর গ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর, দক্ষিণ কোরিয়ার পুশান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ন্যানো ম্যাটারিয়াল বেসড ইলেকট্রো অ্যানালাইটিক্যাল কেমিস্ট্রিতে’ পিএইচডি করেন। এরপর তিনি কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাপান সোসাইটি ফর দ্য প্রমোশন অব সায়েন্স (জেএসপিএস) ফেলোশিপ লাভ করেন এবং ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর পর্যন্ত সেখানে গবেষণা চালিয়ে যান। তারপর সৌদি সরকারের আহ্বানে কিং ফাহাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি কিং ফাহাদ ইউনিভার্সিটি অব পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেলের ইন্টারডিসিপ্লিনারি রিসার্চ সেন্টার-হাইড্রোজেন অ্যান্ড এনার্জি স্টোরেজের (IRC-HES) একজন গবেষণা বিজ্ঞানী (সহযোগী অধ্যাপক) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
ইতোমধ্যে ড. আজিজের ১৯০টি গবেষণাকর্ম বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, বাংলাদেশ, জাপানের মতো বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সম্মেলনে তার গবেষণা কাজ উপস্থাপন করেছেন। এছাড়াও তিনি বহু বিখ্যাত আন্তর্জাতিক জার্নালের অতিথি সম্পাদক-সম্পাদকীয় বোর্ডের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।