তিন বছরের বেশি সময় ধরে বিদ্যালয় না গিয়েও বেতন তুলছেন সহকারী শিক্ষক বিজয় কুমার দেব। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে অংশ নিতে দেখা গেলেও তিনি কোনো শ্রেণি পাঠদানে অংশ নেননি। তিনি খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার পুজগাঙ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। স্থানীদের অভিযোগ সাবেক সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণেই বিজয় কুমারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন বিজয়। এখন মাসে তাঁর বেতন ৩২ হাজার ৩৯০ টাকা। শুরুর দিকে বিদ্যালয়ে আসলেও ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের তিনি পানছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর থেকেই বিদ্যালয়ে অনিয়মিত বিজয় কুমার।
সরেজমিনে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের দেয়ালে লাগিয়ে রাখা রুটিনে শিক্ষক হিসেবে বিজয় কুমার দেবের নাম রয়েছে। তবে কোনো শ্রেণি বা কোনো পাঠ্যক্রমে তাঁকে যুক্ত করা হয়নি।
বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির কয়েক শিক্ষার্থী জানায়, তারা যখন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত, তখন তারা বিজয় কুমার দেবকে বিদ্যালয়ে দেখেছেন। তবে গত দুই বছরের বেশি সময় তাঁকে বিদ্যালয়ে দেখা যায়নি। বিদ্যালয়ে কোনো অনুষ্ঠান হলেই তিনি আসতেন, ক্লাসে আসতেন না।
নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ক্লাস সেভেনের পর থেকে বিজয় স্যার আর কখনও আমাদের ক্লাস নেননি। আমি তাঁকে খুব কমই স্কুলে আসতে দেখেছি।’
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নির্ণয় চাকমা, তথোমনি চাকমা, দেবাশীষ চাকমার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিজয় কুমার দেব মাঝে মাঝে বিদ্যালয়ে আসেন। তবে ক্লাস নেন না। তবে বিজয় কুমার কোন বিষয়ে পড়ান, এর কোনো উত্তর দিতে পারেননি এসব শিক্ষক।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইন্দ্র লাল চাকমা বলেন, ‘আমার জানা মতে, তিনি আওয়ামী লীগের একজন নেতা। আমরা বারবার শোকজ করলেও দাপট দেখিয়ে তিনি স্কুলে আসতেন না। রির্পোট করারও পর স্কুলে আসেন না। স্কুলে আসলেও স্বাক্ষর করে চলে যেতেন। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বেতন উত্তোলন করেন।৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে বিজয় কুমার দেব অসুস্থতাজনিত ছুটিতে রয়েছেন। তাঁর একটি পা ভাঙা বলে ছুটির আবেদনে উল্লেখ করেছেন।’
এসব অভিযোগ নিয়ে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় বিজয় কুমার দেবের সঙ্গে। পলাতক থাকায় তাঁকে তাঁর বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোন নম্বরে বারবার কল করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। সরকার পতনের পর তাঁর ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে। এ পর্যন্ত পানছড়িসহ বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ৪টি মামলা হয়েছে।
পানছড়ি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অরূপ চাকমা বলেন, ‘আমি যতবার বিদ্যালয়ে গিয়েছি, তাঁকে (বিজয় কুমার দেব) একবারও পাইনি। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষককে বলেছি, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। প্রধান শিক্ষক পরবর্তীতে আমাকে কিছু জানাননি।’
পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌমিতা দাশ বলেন, ‘আমার কাছে প্রধান শিক্ষক এই বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেব।’