পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি পাঠ্যবইয়েও বিভিন্ন প্রবন্ধ ও কবিতা সংযোজন-বিয়োজন হচ্ছে। যেখানে যুক্ত হচ্ছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তু। সাতটি গদ্য ও চারটি কবিতা বাদ দেয়া হচ্ছে আগামী বছরের নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্যবিষয়ক পাঠ্যবইয় থেকে। জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা একটি সংকলিত গদ্যসহ মোট দুটি গদ্য যুক্ত হচ্ছে। একটি উপন্যাস বাদ দিয়ে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি উপন্যাস। ইংরেজি বই থেকে একটি অধ্যায় বাদ দিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি নিয়ে লেখাসহ মোট নতুন তিনটি অধ্যায় যুক্ত হচ্ছে। এবার মোট পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা প্রায় ৪০ কোটি ৩৯ লাখ। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এনসিটিবির সূত্রমতে, প্রথমে পাঠ্যবইয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হলেও পরে সিদ্ধান্ত হয় পঞ্চম শ্রেণি থেকে নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের বইয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তু নিয়ে কবিতা ও প্রবন্ধ বা গদ্য যুক্ত হবে।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য নামের পাঠ্যবইয়ে জহির রায়হানের ‘একুশের গল্প’ এবং জুলাই বিপ্লবের ওপর লেখা ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ নামে একটি সংকলিত গদ্য যুক্ত করা হচ্ছে। তবে ইতিমধ্যে বইয়ে থাকা জহির রায়হানের ‘বাঁধ’ গদ্যসহ মোট সাতটি গদ্য বাদ যাচ্ছে। বাদ দেয়া বাকি ছয়টি গদ্য হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দেনাপাওনা’, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘লাইব্রেরি’, কবীর চৌধুরীর ‘পয়লা বৈশাখ’, সেলিনা হোসেনের ‘রক্তে ভেজা একুশ’, হুমায়ূন আহমেদের ‘নিয়তি’ এবং ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘তথ্যপ্রযুক্তি’। অবশ্য একই পাঠ্যবইয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সুভা’ ও ‘লাইব্রেরি’ গদ্য দুটি আগের মতোই রাখা হয়েছে। এ ছাড়া মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘লাইব্রেরি’ গদ্যটি বাদ গেলেও তাঁর লেখা ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ গল্পটি রয়েছে। আর হুমায়ূন আহমেদের ‘নিয়তি’ গদ্য বাদ দেয়া হলেও তাঁর উপন্যাস ‘১৯৭১’ যুক্ত করা হচ্ছে পাঠ্যবইয়ে। বাদ দেয়া হচ্ছে সেলিনা হোসেনের ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসটি।
অন্যদিকে চারটি কবিতা বাদ দেয়া হচ্ছে। অবশ্য নতুন কবিতা যুক্ত করা হচ্ছে না। যে চারটি কবিতা বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো হলো কাজী নজরুল ইসলামের ‘আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমার পরিচয়’, নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বাধীনতা, এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ এবং কামাল চৌধুরীর ‘সাহসী জননী বাংলা’। কাজী নজরুল ইসলামের অপর দুটি কবিতা ‘মানুষ’ ও ‘উমর ফারুক’ রাখা হচ্ছে।
নবম-দশম শ্রেণির ‘ইংলিশ ফর টুডে’ নামের ইংরেজি বইয়ে একটি অধ্যায় বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেটি হলো ইউনিট ওয়ান হিসেবে থাকা ‘ফাদার অব দ্য নেশন’। অন্যদিকে ‘সেন্স অব সেলফ’, ‘লোনলিনেস’ এবং ‘গ্রাফিতি (জুলাই বিপ্লবের ওপর লেখা) ’ নামে নতুন তিনটি অধ্যায় যুক্ত হচ্ছে।
এভাবে পঞ্চম থেকে নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি বইয়ে কিছু প্রবন্ধ বা গদ্য ও কবিতা পাঠ্য হিসেবে সংযোজন ও বিয়োজন হচ্ছে। পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে থাকা ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও তাঁর উদ্ধৃতি বাদ যাচ্ছে। একই সঙ্গে ইতিহাসনির্ভর বিষয়েও অনেক পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, দশম শ্রেণি পর্যন্ত ইতিহাসবিষয়ক পাঠ্যপুস্তকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পর্যন্ত বিষয়বস্তু স্থান পেয়েছে। তাই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তু সাহিত্যের ধাঁচে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বইয়ের পেছনের পৃষ্ঠায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি যুক্ত করা হচ্ছে। আর পাঠ্যবইয়ে দলীয় প্রচার-প্রোপাগান্ডার বিষয়গুলো বাদ দেয়া হচ্ছে।