পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা নয়, গুণগত মান জরুরি - দৈনিকশিক্ষা

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা নয়, গুণগত মান জরুরি

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: কোনো এক অস্পষ্ট কারণে সরকার দেশের ৬৪ জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানা মতে, এই সরকারের আমলে আজ পর্যন্ত ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যেগুলো একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং আরও ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তাবিত আছে। আমি মনে করি, দেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতা সাপেক্ষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। রোববার (২৮ এপ্রিল) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরো জানা যায়, এ বিষয়ে লিখতে গেলে সবার আগে আসে আমরা কি মানসম্পন্ন শিক্ষা চাই, নাকি ক্যাম্পাসে একটা নির্দিষ্ট সময় অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের মাঝে সনদ বিতরণই যথেষ্ট মনে করছি। দেখবেন, আমাদের জনপ্রতিনিধিরা তাদের রাজনৈতিক ইশতেহারে নিজ এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আশ্বাস দিয়ে থাকেন এবং নির্বাচনের পর সেটি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের উচ্চ মহলে যোগাযোগ বাড়ান। তাদের অনেকে সফল হয়েছেন, কেউ কেউ হয়তো ভবিষ্যতে সফল হবেন।

আমার উদ্বেগের জায়গা হলো, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিচ্ছি ঠিকই কিন্তু তার আগে গবেষণাগার, ক্লাসরুম, পরিবহন ইত্যাদির মতো অবকাঠামোগত বিষয়গুলো বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন– তা পূরণ করতে পারছি না। সবচেয়ে বড় প্রয়োজন, যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক– তার প্রায় কিছুই আমরা দিতে পারছি না। মোট কথা, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছি যথাযথ পরিকল্পনা, অবকাঠামো, ক্লাসরুম ও লাইব্রেরি ছাড়া। সর্বোপরি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা নিছক দলীয় বিবেচনায় একপ্রকার রাজনীতিক উপাচার্য নিয়োগ দিচ্ছি, যাদের অনেকেই বিগত সময়ে ঢাকা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করেছেন। তারা ভাড়া করা একটি নির্দিষ্ট কলেজ কিংবা ভাড়া করা একটি নির্দিষ্ট বিল্ডিংয়ে তাদের সময় অতিবাহিত করে আসছেন। তারা না পারছেন একটি অবকাঠামো দাঁড় করাতে,  না পারছেন একটি ভালো গবেষণাগার করতে। অনেক সময় হয়তো তারা অল্প সময় হাতে পান, যা কাঠামো করার জন্য যথেষ্ট নয়।

আমি ব্যক্তিগতভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের খবর জানি, যার একটি ব্যাচ অনার্স কোর্স শেষ করে বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম কিংবা বের হয়ে গেছে, অথচ যার নিজস্ব কোনো অবকাঠামো নেই। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি রাজনৈতিক উপাচার্য নিয়োগের ফলে নিয়োগ বাণিজ্য, অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি হচ্ছে; অর্থাৎ আমরা এই যে জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে যাচ্ছি তা প্রকৃতপক্ষে উচ্চশিক্ষার জন্য মঙ্গলজনক কিছু বয়ে নিয়ে আসছে না।
একজন উপাচার্য সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের, শিক্ষকদের,  কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তথা সবার অভিভাবক। সুতরাং, তাঁর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একাডেমিক ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাকে জোর দেওয়া দরকার। কারণ উপাচার্য যদি একাডেমিক হন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়াকে একটি স্বচ্ছতার ও জবাবদিহির জায়গায় নিয়ে আসতে পারবেন।  আমরা জানি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়াটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। সরকার তার রাজনৈতিক আদর্শধারী ব্যক্তিকে উপাচার্য নিয়োগ দিক, আপত্তি নেই; কিন্তু একই রাজনৈতিক আদর্শসম্পন্ন একজন ভালো একাডেমিশিয়ান ও প্রশাসনিক কাজে দক্ষ ব্যক্তিকে 
উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গতিশীলতা আরও অনেক বেশি বাড়বে। 

আমরা জানি, এখনও পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই বিদেশে পড়তে যাওয়ার সংখ্যা বেশি, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা বাইরে পড়তে যাচ্ছে না, তা নয়; কিন্তু সংখ্যাটা নগণ্য। আমি এর দায় ছাত্রছাত্রীদের ওপরে চাপাব না, আমরা যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাদের বের করে দিচ্ছি, সেটি এই গ্লোবালাইজেশনের যুগে পর্যাপ্ত নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমরা যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় করছি তা উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনার সঙ্গে একেবারেই বেমানান।

সরকারের উচিত আমাদের দেশের বিজ্ঞ অধ্যাপকদের সমন্বয়ে একটি বোর্ড গঠন করা এবং উচ্চশিক্ষার জন্য একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ ও প্রণয়ন করা। অবশ্যই সেই অধ্যাপকদের শিক্ষাবিষয়ক গবেষণা ও তার বাস্তবিক প্রয়োগ নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে তার আগে সরকারের উচিত নতুন কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন না দিয়ে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তার সংকট দূর করা অর্থাৎ তার অবকাঠামো, বাজেট, গবেষণা, শিক্ষক নিয়োগ ও পরিবহন সমস্যা দূর করা। 
বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সুদিন ফিরে পাক– এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রইলাম।

লেখক: জিয়া আহমেদ, পিএইচডি গবেষক, মিসিসিপি স্টেট ইউনিভার্সিটি ও সহকারী অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট
 

পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা - dainik shiksha পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম - dainik shiksha ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় - dainik shiksha এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো - dainik shiksha প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031089782714844