দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: পাল্টে যাচ্ছে মাধ্যমিক (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা পদ্ধতি। একইসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষার নামও পাল্টে যাবে কিনা তা নিয়েও আলোচনা চলছে। এ বছর যারা নবম শ্রেণিতে পড়ছে, তারাই নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রথমবারের মতো ২০২৬ সালে পাবলিক পরীক্ষা দেবে। আগামী বছর দশম শ্রেণি শেষ করে তারা এই পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেবে। বুধবার (৩ মার্চ) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে তৈরি হওয়া মূল্যায়ন সংক্রান্ত প্রস্তাবিত খসড়ায় বলা হয়েছে, ১০০ নম্বরের মধ্যে ৪০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন, ৩০ নম্বরের হাতেকলমে লিখিত পরীক্ষা এবং ৩০ নম্বর সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে। এর ফলে এতদিন ধরে চলে আসা পাবলিক পরীক্ষার আমূল পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, নতুন শিক্ষাক্রমে লিখিত পরীক্ষায় বিষয়টি সংযুক্ত ছিল না। অভিভাবক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের চাপে, মূল্যায়ন পদ্ধতিতে নতুন করে লিখিত পরীক্ষা ঢুকানো হচ্ছে। লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্ন কোথা থেকে করা হবে- পাঠ্যবই থেকে না অন্য কোনো উৎস থেকে সেটি এখনো ঠিক হয়নি। এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে মতভেদ থাকলেও শীঘ্রই তা চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আগে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষাক্রম মিলিয়ে পাবলিক পরীক্ষা হতো। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) পাবলিক পরীক্ষার যে মূল্যায়ন কাঠামোর খসড়া করেছে তাতে বলা হয়েছে, নতুন শিক্ষাক্রমে শুধু দশম শ্রেণি শেষে মূল্যায়ন করা হবে। এর নাম এসএসসি পরীক্ষাও হতে পারে, আবার পাবলিক মূল্যায়নও হতে পারে। তবে পরীক্ষা বা মূল্যায়ন যেটাই থাকুক না কেন তাতে লিখিত পরীক্ষাও থাকছে। প্রকল্পভিত্তিক কাজ, অ্যাসাইনমেন্ট, সমস্যার সমাধান ইত্যাদির পাশাপাশি একটি অংশের মূল্যায়ন হবে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে। তবে এই লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও উত্তর দেয়ার ধরন এখনকার মতো মুখস্থনির্ভর হবে না। একজন শিক্ষার্থী যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করবে, সেগুলোই মূলত সৃজনশীল উপায়ে লিখতে বলা হবে।
জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, কমিটি কয়েকদফা সভা করে পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি অনেকটা চূড়ান্ত করে এনেছে। এখন লিখিত আকারে প্রতিবেদনটি সরকারের কাছে জমা দেয়া হবে। তারপর শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষাবিদদের সঙ্গে বসে পুরো বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডগুলোর সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, মূল্যায়নপদ্ধতি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে চূড়ান্ত করার জন্য আলাপ আলোচনা চলছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গত বছর থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। প্রথম বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন এই শিক্ষাক্রম শুরু হয়। এ বছর নতুন করে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতেও চালু হয়েছে এই শিক্ষাক্রম। পর্যায়ক্রমে ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। এই শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বড় অংশ হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে (শিক্ষাকালীন) মূল্যায়ন। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পুরোটাই মূল্যায়ন হবে সারাবছর ধরে চলা বিভিন্ন ধরনের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। চতুর্থ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কিছু অংশের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন এবং বাকি অংশের মূল্যায়ন হবে সামষ্টিকভাবে, মানে পরীক্ষার ভিত্তিতে।
নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন কাঠামো নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে অস্পষ্টতা আছে। অভিভাবকদের একটি অংশ মূল্যায়নে লিখিত পরীক্ষা রাখার দাবি জানিয়ে আসছে। এমন অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে মূল্যায়ন কাঠামোয় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে আসছিল। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ও মূল্যায়নপদ্ধতি চূড়ান্ত করতে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটিও করে সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে মূল্যায়ন পদ্ধতির খসড়া তৈরি করেছে এনসিটিবি। সেখানে নতুন শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেটের মতো পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়ন কেমন করে হবে, সেটি বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে।
এনসিটিবির সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, গত সোমবার মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করা সংক্রান্ত কমিটি আমাদের ডেকেছিল। আমরা আমাদের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছি। বলেছি, নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষা নয়, মূল্যায়ন থাকবে। আর বোর্ডগুলো চাইছে ওএমআর ভিত্তিতে উত্তরপত্র বিতরণ এবং লিখিত পরীক্ষা নিতে। আমরা বোর্ডগুলোর প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে হাতেকলমে টেস্ট নেয়ার রূপরেখাও দিয়েছি।
এনসিটিবির সূত্রমতে, দশম শ্রেণি শেষে হবে এই পাবলিক পরীক্ষা। তবে নামটি এখনকার মতো মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষাও থাকতে পারে, আবার ভিন্ন নামও হতে পারে। নামের বিষয়টি এখনো ঠিক হয়নি। এতদিন নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষা হতো। নতুন শিক্ষাক্রমে শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে এই মূল্যায়ন বা পরীক্ষা।
১০টি বিষয়ের প্রতিটির ওপরই হবে এই মূল্যায়ন। এর মধ্যে একটি অংশের মূল্যায়ন হবে বিদ্যালয়েই শিখনকালীন। বাকি আরেকটি অংশের মূল্যায়ন হবে কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীন। এখনকার মতোই কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা ঠিক করে হবে এই পরীক্ষা। শিখনকালীন ও পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়ন সমান গুরুত্ব পাবে।
মূল্যায়নের খসড়া অনুযায়ী, কেন্দ্রীয়ভাবে যে পরীক্ষা বা মূল্যায়ন কার্যক্রম হবে, তাতে প্রতিটি বিষয়ের মূল্যায়ন হবে এক কর্মদিবসের সর্বোচ্চ ৫ ঘণ্টায়। বিরতি দিয়ে হবে এই পরীক্ষা। এর মধ্যে একটি অংশের মূল্যায়নে অনুসন্ধান, প্রদর্শন, মডেল তৈরি, উপস্থাপন, পরীক্ষণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি বিষয় থাকবে। মানে হাতেকলমে শেখার বিষয়টি মূল্যায়ন করা হবে।
আরেকটি অংশে থাকবে লিখিত পরীক্ষা। সেখানে লিখিত উত্তরপত্র ব্যবহার করা হবে। লিখিত পরীক্ষার অংশ বিষয়ভেদে ১ ঘণ্টা থেকে ২ ঘণ্টাও হতে পারে। সময়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়ন কাঠামোর সঙ্গে মিল রেখে বিদ্যালয়ে বিভিন্ন শ্রেণিতে মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালিত হবে। বিভিন্ন শ্রেণিতে বছরজুড়ে শিখনকালীন মূল্যায়নের পাশাপাশি বছরে দুটি সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। এর মধ্যে একটি হবে শিক্ষাবর্ষের ৬ মাস পর এবং আরেকটি হবে ১২ মাস পর। বিদ্যালয়ের এসব মূল্যায়নেও এক দিনে এক বিষয়ের মূল্যায়ন হবে।
নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়নের রূপরেখা অনুযায়ী, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট বা এসএসসি পরীক্ষার মতো পাবলিক পরীক্ষা বা মূল্যায়নে হাতেকলমে কাজের পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষাও থাকবে। তবে লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও উত্তর দেয়ার ধরন এখনকার মতো মুখস্থনির্ভর হবে না। একজন শিক্ষার্থী শিক্ষাক্রম অনুযায়ী যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করবে, সেগুলোই মূলত সৃজনশীল উপায়ে লিখতে হবে। আর অনুসন্ধান, প্রদর্শন, মডেল তৈরি, উপস্থাপন, পরীক্ষণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি বিষয়ের মাধ্যমে হাতেকলমে মূল্যায়ন হবে। মূল্যায়ন পদ্ধতির খসড়া অনুযায়ী, শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রতিটি বিষয়ের মূল্যায়ন হবে এক কর্মদিবসের সর্বোচ্চ ৫ ঘণ্টায়। বিরতি দিয়ে হবে এ মূল্যায়ন। লিখিত পরীক্ষা বিষয়ভেদে ১ ঘণ্টা থেকে ২ ঘণ্টাও হতে পারে। গত সোমবারের বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে, নতুন শিক্ষাক্রমে নম্বর দেয়ার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। তাই লিখিত ও হাতেকলমে কাজের অংশে কত শতাংশ মূল্যায়ন হবে, সেটি নিয়ে আলোচনা করে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রসঙ্গত গত ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন কারিকুলামে পরীক্ষা পদ্ধতি ফেরাতে ১৪ সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই কমিটি মূল্যায়ন পদ্ধতির একটি খসড়া তৈরি করে। তাতে বলা হয়, এসএসসি পরীক্ষার মতো পাবলিক পরীক্ষা বা মূল্যায়নে হাতেকলমে কাজের পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষাও রাখা হবে। এ লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও উত্তর দেয়ার ধরন এখনকার মতো মুখস্থনির্ভর হবে না।