গায়ে সোনালি এবং সবুজ রঙের দাগকাটা। পুকুরের ধারে চুপটি করে বসেছিল সে। হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ল একটি ব্যাঙের উপর। পিছনের পা কামড়ে টানা বসে রইল সে। ধীরে ধীরে মুখের ভিতর ঢুকিয়ে ফেলল ব্যাঙটিকে। যৌনমিলনের পর পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে এমন আচরণই করে থাকে এক বিশেষ প্রজাতির স্ত্রী ব্যাঙ।
অস্ট্রেলিয়ার নিউ ক্যাসেল ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিদ জন গোল্ড। গবেষণার প্রয়োজনে অস্ট্রেলিয়ার উত্তর সিডনির কুরাগ্যাং দ্বীপে গিয়েছিলেন তিনি। সেই দ্বীপে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখেন জন। দেখেন, একটি স্ত্রী ব্যাঙের মুখে রয়েছে একটি পুরুষ ব্যাঙ।
কুরাগ্যাং দ্বীপে বেল প্রজাতির সবুজ এবং সোনালি রঙের ব্যাঙ পাওয়া যায়। সারা বিশ্বে বেল প্রজাতির ব্যাঙের সংখ্যা কমে আসছে। এই ব্যাঙগুলির আচরণ-গতিপ্রকৃতি নিয়ে গবেষণা করেন জন।
সম্প্রতি জনের গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূল জুড়ে বেল প্রজাতির ব্যাঙ পাওয়া যেত। কিন্তু সাইট্রিড ছত্রাকের সংক্রমণে ব্যাঙের সংখ্যা এক ধাক্কায় অনেকটাই কমে যায়। বর্তমানে কুরাগ্যাং দ্বীপেই বেল প্রজাতির ব্যাঙ বেশি সংখ্যায় পাওয়া যায়। তাই সেই দ্বীপেই গিয়েছিলেন জন।
দ্বীপে গিয়ে বেল প্রজাতির স্ত্রী ব্যাঙের মধ্যে এক অদ্ভুত আচরণ লক্ষ করেন জন। তিনি দেখেন, একই প্রজাতির পুরুষ ব্যাঙকে ধরে খাচ্ছে স্ত্রী ব্যাঙ।
জনের দাবি, বেল প্রজাতির স্ত্রী ব্যাঙের মধ্যে ‘সেক্সুয়াল ক্যানিবলিজ়ম’ লক্ষ করেছেন তিনি। অর্থাৎ স্ত্রী ব্যাঙ যে পুরুষ ব্যাঙকে সঙ্গী হিসাবে পছন্দ করছে, তাকেই খেয়ে ফেলছে।
জন তাঁর গবেষণাপত্রে জানিয়েছেন, সাধারণত যৌন মিলনের জন্য পুরুষ ব্যাঙকে আকৃষ্ট করে স্ত্রী ব্যাঙ। কিন্তু মিলনের ঠিক আগের মুহূর্তে তার মন বদলে যেতে পারে।
যে পুরুষ ব্যাঙের সঙ্গে যৌন মিলন করবে বলে ভেবেছিল, তাকেই শিকার করে বসে বেল প্রজাতির স্ত্রী ব্যাঙ।
যৌন মিলনের আগেই শুধু নয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে যৌন মিলন চলাকালীনও পুরুষ ব্যাঙকে গিলে ফেলে স্ত্রী ব্যাঙ।
জনের দাবি, অধিকাংশ সময় পুরুষ ব্যাঙের সঙ্গে যৌন মিলন সম্পূর্ণ হয়ে যায় স্ত্রী ব্যাঙের। কিন্তু তার পর পুরুষ ব্যাঙের গায়ে হঠাৎ কামড় বসিয়ে দেয়।
শুধু বেল প্রজাতির স্ত্রী ব্যাঙের মধ্যেই নয়, ‘সেক্সুয়াল ক্যানিবলিজ়ম’ দেখা যায় কয়েক প্রজাতির সাপ এবং শামুকের মধ্যেও।
তবে জন গবেষণা করে লক্ষ করেছেন, বেল প্রজাতির স্ত্রী ব্যাঙের শিকারের সময় যদি তার সঙ্গী পালিয়ে যায়, তখন অন্য প্রজাতির ব্যাঙকে খেয়ে ফেলে সে।