ফুটবল বিশ্বের অলিখিত সম্রাট পেলের মৃত্যুতে তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনেরো। বৃহস্পতিবার পেলের মৃত্যুর কিছুক্ষণের মধ্যেই এ ঘোষণা দিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট।
১৯৫৮, ১৯৬২ এবং ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের বিশ্বকাপ আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল। সেই ঐতিহাসিক ফুটবল দলের সদস্য পেলের প্রকৃত নাম অ্যাডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো। পেলেই বিশ্বের একমাত্র ফুটবলার যিনি হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপ আসরে জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় হিসেবে নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং বিজয়ী হয়েছেন।
এছাড়া নিজের পুরো ক্যারিয়ারে ব্রাজিলের জাতীয় দলের হয়ে তিনি গোল করেছেন মোট ১ হাজার ২৮২টি। এটি ব্রাজিলের জাতীয় দলের কোনো খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড এখন পর্যন্ত এই রেকর্ড কেউ স্পর্শ করতে পারেনি। ক্যারিয়ারের প্রায় পুরো সময় তিনি খেলেছেন ব্রাজিলের ফুটবল ক্লাব সান্তোসের হয়ে।
১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ অক্টোবর ব্রাজিলের মিনাস গেরিয়াস প্রদেশের ত্রেস কোরাকোস শহরের এক হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া পেলে তার অসাধারণ ক্যারিয়ার সাফল্য ও ক্রীড়ানৈপুন্যের কারণে ফুটবল বিশ্বের কিংবদন্তি হিসেবে পরিচিত। ব্রাজিলে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘ও রেই’ বা ‘রাজা’ নামে।
চলতি ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে ৮২ বছর পূর্ণ করেন পেলে। বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক জটিলতা ও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে কিছুদিন আগে ব্রাজিলের সাওপাওলো শহরের অ্যালবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত দেড়টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
পেলের মেয়ে কেলি নাসিমেন্তো প্রথম তার বাবার মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেন, পরে তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট থেকেও জানানো হয় এ খবর।
তার মৃত্যুর পর ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গণের পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে রাজনীতিক, বিনোদন ও সংস্কৃতি কর্মীরা শোক জানিয়েছেন।
মৃত্যুর আগে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে নিজের শেষ ইচ্ছের কথা বলে গেছেন পেলে। সে অনুযায়ী, তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে সাও পাওলো রাজ্যের ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে। তার আগে সমাহিতের জন্য ফুটবল মহাতারকার মরদেহ প্রস্তুত করা হবে আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে।
সেখান থেকে আগামী ২ জানুয়ারি কফিন নিয়ে যাওয়া হবে তার স্মৃতি বিজড়িত ক্লাব সান্তোস প্রাঙ্গণে। ক্লাবের পক্ষে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সর্বসাধারণের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য ‘ফুটবলের রাজার’ মরদেহ ২৪ ঘণ্টা রাখা হবে স্টেডিয়ামের মাঝমাঠে।
পরের দিন তার মরদেহ নিয়ে ‘শেষযাত্রা’ হবে সান্তোসের রাস্তায়। কফিন বহন করে নিয়ে যাওয়া হবে কেলেস্তের সড়কে, যেখানে পেলের মা থাকেন। ১০০ বছর বয়সী পেলের মা শয্যাশায়ী।
যাত্রাশেশে পেলেকে মেমোরিয়া নেকরোপোল একিউমেনিকা নামের সমাধিস্থলে পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে সমাহিত করা হবে পেলেকে। তবে সেখানে সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার থাকবে না।