পোশাক কারখানায় ছাপা হতো জাল টাকা - দৈনিকশিক্ষা

পোশাক কারখানায় ছাপা হতো জাল টাকা

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

তৈরি পোশাক কারখানায় পোশাক নয়, তৈরি হচ্ছিল টাকা! আর সেই কারখানা থেকেই গুনে গুনে উদ্ধার করা হলো কোটি টাকা। সঙ্গে বিদেশি দামি মদ ও জাল টাকা তৈরির অত্যাধুনিক মেশিন ও বিভিন্ন সরঞ্জাম। দিনভর চলা অভিযান শেষে হাতকড়া পরিয়ে যখন বাইরে আনা হলো সেই পোশাক কারখানার মালিক ও তার সহযোগীদের, তখনো ঘোর কাটছিল না স্থানীয়দের।

তৈরি পোশাক কারখানার অভ্যন্তরে গত মাস ছয়েক ধরে এভাবেই রীতিমতো ‘টাঁকশাল’ গড়ে তুলেছিলেন সাউথ বেঙ্গল এপারেলস অ্যান্ড বারটিক বুটিকস লিমিটেড নামের গার্মেন্টস কারখানার মালিক সাখাওয়াত হোসেন খান (৫০)। তিনি বরিশাল জেলার মুলাদী থানার ডিগ্রিরচর খান বাড়ির জয়নাল আবেদীন খানের ছেলে।

আটক অন্যরা হলেন শরীয়তপুর জেলার পালং থানার গয়াধর গ্রামের আল ইসলাম সরদারের ছেলে সুজন মিয়া ও বরিশাল জেলার মুলাদী থানার বয়াতিকান্দি গ্রামের মানিক মোল্লার ছেলে নাজমুল হোসেন। 

গতকাল বেলা ১১টার দিকে সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নের সাধাপুরের পুরান বাড়ি এলাকার ওই তৈরি পোশাক কারখানার সামনে গিয়ে দেখা যায় পাশেই জামে মসজিদ। সেই মসজিদেও নিয়মিত অনুদান দিতেন সাখাওয়াত। যে কারণে সকলের সন্দেহের ঊর্ধ্বে ছিলেন তিনি। বেহাল রাস্তাঘাটে খানাখন্দ। কোথাও ডোবা রাস্তা। এসব পেরিয়ে সেই কারখানায় পৌঁছতেও বেগ পেতে হয় গণমাধ্যম কর্মীদের। কারখানার মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করে দেখা যায় মধ্যম সারির কারখানায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে তৈরি পোশাক। ভেতরে সারি সারি তৈরি পোশাক মেশিন। সেগুলো পেরিয়ে ওয়াশরুমের সামনে দিয়ে সরু পথ ধরেই ঠিক পেছনে চলে গেছে টাকা তৈরির আলাদা কারখানার ঠিকানা। সেখানে ক্রমিক নম্বর দিয়ে রাখা অধ্যাধুনিক প্রিন্টিং মেশিন। বিতরণের অপেক্ষায় ছাপা পড়ে আছে কোটি টাকার জালনোট। সাউথ বেঙ্গল এপারেলস গার্মেন্টস কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, প্রায় সাত কোটি টাকা

ব্যাংক লোন নিয়ে তিনি এই কারখানা গড়ে তুলেছিলেন। তবে লোকসানের কারণে হঠাৎ ঘনিষ্ঠদের দেখানো পথ ধরেই গড়ে তোলেন কথিত এই ‘টাঁকশাল’।

আমি ছয় মাস ধরে টাকা তৈরির কারখানা খুলেছি। তবে এখনো সুবিধা করতে পারিনি। তার আগেই ধরা পড়ে গেলামÑ যোগ করেন সাখাওয়াত হোসেন খান।

কারখানার কর্মচারী সুজন মিয়া জানান, আমি মাসে ৩০ হাজার টাকা বেতন পেতাম। কাজ হিসেবে ১ হাজার টাকার নোট ছাপাতাম। তিনি জানান, অত্যধিক গোপনে আমাদের দিয়ে টাকা ছাপার কাজটি করতে হতো।

অভিযান শেষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান পিপিএম (বার) বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাবাদে কারখানার মালিক আমাদের জানিয়েছেন, তার আর্থিক সমস্যার সুযোগে গত চার মাস আগে সাইফুল নামের সাবেক এক ব্যাংক কর্মকর্তা এবং আহসান উল্লাহ মন্ডল ও নুরুনবী নামে অপর দুই ব্যক্তি তাকে জাল টাকা বানানোর প্রস্তাব দেয়। তারাই মূলত এই জাল টাকা প্রস্তুতির সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে। তার বক্তব্য আমরা খতিয়ে দেখছি।

আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে গরুর হাটে এই জালনোট ব্যবহার করে বিপুল অর্থের মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন তারা। তাদের আরও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানান এসপি।

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অপস অ্যান্ড ট্রাফিক) আব্দুল্লাহিল কাফী জানান, কারখানা থেকে জব্দ করা জালনোটের রং, ডিজাইন ও জলছাপ, মাইক্রোপ্রিন্ট, খসখসে লেখাসহ অন্যান্য সব নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সত্যিই হতবাক করা মতো। তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার এক ব্যক্তি লিচু কিনতে সাভার বাসস্ট্যান্ডে যান। সেখানে লিচু কিনে তিনি ১ হাজার টাকা মূল্যমানের নোট দিলে সন্দেহ হয় বিক্রেতার। পরে তিনি সাভার থানায় কর্মরত একজন পুলিশ সদস্যকে বিষয়টি জানালে অনুসন্ধানে নামে পুলিশ। সেই জালনোটের উৎসের সন্ধান করতে গিয়েই মেলে এই কারখানার। আটকদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

পুলিশের ব্রিফিংয়ে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক উত্তর) আব্দুল্লাহিল কাফী পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুল ইসলাম, সাভার মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা ও বনগাঁও ইউনিয়নের ভবানীপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মোখলেসুর রহমান।

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0062949657440186