প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার চাই - দৈনিকশিক্ষা

প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার চাই

অলোক আচার্য |

মায়ের ভাষা আমাদের অধিকার। সেই অধিকার আদায়ের পেছনে রয়েছে মহান আত্মত্যাগের ইতিহাস। ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে সেই ইতিহাসেরই স্মরণ করি, আমরা গর্ববোধ করি। বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্ম জানতে পারেন.. ভাষার ইতিহাস। অথচ দেশের শতভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আজও শহীদ মিনার গড়ে ওঠেনি। ভাষা বিজয়ের ৭১ বছরের পূর্ণতায় এ আমাদের বেদনা ও  ব্যর্থতার ছবি। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্মাণের জন্য ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। আর ২০১৬-তে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ২২ হাজার ৬২৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে। বাকি ৪২ হাজার ৯৪৩ বিদ্যালয়ে তা নেই। অর্থাৎ প্রায় দুই তৃতীয়াংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই কোনো শহীদ মিনার। শিশু তার ভাষা শিক্ষার শুরু করে মায়ের মুখ থেকে শুনে এবং তার প্রাতিষ্ঠানিক ভাষা শিক্ষা শুরু হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পর। বাড়িতে দীর্ঘদিন সে ভাষার নানা দিকের সঙ্গে  সে পরিচিত হয়। বর্ণমালার প্রাথমিক পরিচয়ও তার সম্পন্ন হয়। তারপর যখন সে প্রাক প্রাথমিক শ্রেণিতে ভর্তি হয়..তখন তার শিখন প্রক্রিয়া শুরু হয় আনুষ্ঠানিকভাবে। বর্ণের ব্যবহার, শব্দ তৈরি,শব্দ থেকে বাক্য গঠন এবং বাংলা ভাষার মাধুর্যতার সঙ্গে ক্রমেই তার পরিচয় ঘটতে থাকে। এভাবেই শিশু বড় হয়। এখান থেকেই শিশুর ভাষার প্রতি দায়িত্ববোধ এবং মমত্ববোধ তৈরি হতে থাকে। প্রতি বছর ২শে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা অংশ নেন। ভাষা আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে তাদের বাংলা ভাষার সেই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় ঘটতে থাকে। তারা ক্রমেই জানতে পারেন যে, এই ভাষা একদিন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিলো। 

এই ভাষার প্রতি যে দায়িত্ববোধ রয়েছে তা তারা বুঝতে শেখে। আমাদের দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা প্রয়োজন। এতে ছাত্রছাত্রীরা ভাষার পেছনের সঠিক ইতিহাস জানতে আগ্রহী হবেন এবং জানতে পারবেন। ভাষার প্রতি যে গভীর ভালোবাসা থাকা প্রয়োজন-তা অনুধাবন করতে পারবেন। দেখা যায়, বাঁশ,কাঠ এমন কী কলাগাছ দিয়েও শহীদ মিনার নির্মাণ  করে সেখানে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ফুল অর্পণ করেন।

তারা নিজ উদ্যোগে এই মহান কাজটি করেন। অথচ আমরা তাদের জন্য তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই  প্রস্তুত করতে পারতাম। কতো কিছুই তো হচ্ছে। তাহলে শহীদ মিনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকবে না কেনো? ভাষার মাধ্যমেই আমাদের ব্যক্তিত্বের অনন্য প্রকাশ ঘটে। পৃথিবীর আলো দেখার পর থেকেই মা এবং আশপাশের মানুষের মুখে নানা ভাষা শুনে শিশু ভাষার প্রতি আকৃষ্ট হয়। সেটাই তার মাতৃভাষা। সেই ভাষা চর্চার মধ্যে দিয়েই শিশু বড় হয়ে উঠতে থাকে। কোনো দেশের জন্য, কোন জাতির জন্য ভাষা অত্যন্ত সুমধুর ও  গুরুত্বপূর্ণ। ভাষার স্বাধীনতা থাকা আবশ্যক। 

আমারা সৌভাগ্যবান যে..আমাদের সেই স্বাধীনতা রয়েছে।  আমাদের দেশে সারা বছর বাংলা নিয়ে চর্চা হবে। সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর করার চেষ্টা করা হবে ভাষাকে। স্কুল-কলেজগুলোতে বাংলা ভাষা নিয়ে বিস্তর  কাজ হবে। আর সেটার শুরু হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণ করার মাধ্যমে।  ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে ভাষা আন্দোলনে শহীদদের সেই মহান আত্মত্যাগ, সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি এসব কিছুই বাংলাকে নিয়ে গর্ব করার জন্য যথেষ্ট। এছাড়াও এ ভাষা নিয়ে বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে বলার অনেক কিছু আছে। মাতৃভাষাকে অবহেলা ও উপেক্ষা করে বিদেশি ভাষা চর্চা গুরুত্বের আধিক্যের ফল কখনো শুভ হয় না।  

নিজ ভাষাকে প্রথমে জানতে হবে,বুঝতে হবে ও আত্মস্থ করতে হবে। তারপরই না বিদেশি ভাষা চর্চায় গতি আসবে। তাই তো কবিগুরুর সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতে চাই, আগে চাই বাংলা ভাষার গাঁথুনি, তারপর বিদেশি ভাষার পত্তন। শিশুকাল থেকেই সেই গাঁথুনি মজবুত করতে হবে। এজন্য চাই বাংলা ভাষার সেই ইতিহাস..যা নিয়ে আমরা আজও গর্বিত। যে সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের কারণে আমরা বাংলা ভাষা নিজেদের করে পেয়েছি এবং যা  পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী  জোর করে বদলে দিতে চেয়েছিলো- সেই ইতিহাস তাদের জানাতে হবে। বোঝাতে হবে। আর সেই ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনার..যা দেখে তারা শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে পারে।প্রজন্ম বাংলাকে সারা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি শহীদ মিনার থাকার অর্থ হলো, শিক্ষার্থী প্রতিদিন তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে শহীদ মিনার দেখবে এবং তার মনে দায়িত্ববোধের জন্ম নেবে। বাংলা ভাষাকে বিশ্বের দরবারে আরও উঁচুতে পৌঁছে দিতে এ প্রজন্মই  যুগোপযোগী ভূমিকায় অবতীর্ণ  হবে।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক 

 

এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প বিসিএসে আনুকূল্য পেতে যেচে তথ্য দিয়ে বাদ পড়ার শঙ্কায় - dainik shiksha বিসিএসে আনুকূল্য পেতে যেচে তথ্য দিয়ে বাদ পড়ার শঙ্কায় বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ছাত্রলীগ নেতাকে উপাচার্যের পিএস নিয়োগ - dainik shiksha বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ছাত্রলীগ নেতাকে উপাচার্যের পিএস নিয়োগ ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ জাল সনদে চাকরি করছেন এক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছেন এক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ছাত্র আন্দোলনে নি*হত ৯ মরদেহ তোলার নির্দেশ - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নি*হত ৯ মরদেহ তোলার নির্দেশ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035419464111328