জন্ম থেকেই দুপায়ে শক্তি নেই। পা দুটো বাঁকা। চলতে হয় হাটুতে ভর দিয়ে। হাতের আঙ্গুলেও তেমন একটা জোর নেই। পাবনার ভাঙ্গুড়ার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের জসিম ফকির-চম্পা দম্পতির অভাবের সংসারে ছয় সদস্যের পরিবারের মধ্যে প্রতিবন্ধী চাদ বাবুই সবার বড়। অদম্য ইচ্ছাশক্তি প্রতিবন্ধকতা ও দারিদ্রতা চাদ বাবুর পড়ালেখা আটকে রাখতে পারেনি। প্রতি মাসের তার আশপাশের ৫০/৬০ পরিবারের বিদ্যুৎ বিল উঠিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে জমা দিয়ে বিলপ্রতি ১০ টাকা করে যে অর্থ পায় তা দিয়েই চলছে তার পড়ালেখার খরচ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হতদরিদ্র জসিম ফকির-চম্পা দম্পতির ৪ সন্তানের মধ্যে প্রতিবন্ধী চাদ বাবু সবার বড়। বাবা জসিম ফকির ইটভাটার শ্রমিক। সুস্থ থাকলে প্রতিদিন কাজ করে যে অর্থ পায় তা দিয়ে তাদের সংসার চলে। তিনি অসুস্থ হলে সংসার চালাতে অভাবের হোঁচট খেতে হয়। পড়ে যায় অভাবের কষ্টে। তদুপরি ৪ সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চালাতে মাঝেমধ্যেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ এক সন্তান প্রাথমিকে, দুই সন্তান মাধ্যমিকে ও বড় সন্তান প্রতিবন্ধী চাদ বাবু একাদশ শ্রেণির ছাত্র। জন্ম থেকেই চাদ বাবুর দুটো পায়ে শক্তি নেই। পা দুটো বাঁকা। চলতে হয় হাটুর উপর ভর দিয়ে। দুই হাতেও তেমন একটা শক্তি পায় না। কিন্তু বাবার বড় ছেলে বলে কথা। তার কিছু একটা করে পড়ালেখার খরচ যে আংশিক জোগাড় করতেই হবে। সে লক্ষ্য নিয়েই মায়ের সহযোগিতায় প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে ৫০/৬০ পরিবারের বিদ্যুৎ বিল উঠিয়ে নিয়ে হুইল গাড়িতে ভাঙ্গুড়া বিদ্যুৎ অফিসে জমা দেন প্রতিবন্ধী চাদ বাবু। এতে ওই প্রতিবেশীরা প্রতি বিলের বিপরীতে প্রতিবন্ধী চাদ বাবুকে ১০ টাকা করে দেন। তাতে প্রতি মাসে যে অর্থ পান তাই দিয়েই তার পড়ালেখার খরচ চলে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে দরিদ্র পরিবারের সন্তান চাদ বাবু ইতোমধ্যেই পড়ালেখার যে নজির দেখিয়েছে তা প্রশংসাযোগ্য। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পড়ালেখার বিষয়ে সহযোগিতা ও খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। এভাবেই তিনি আরো এগিয়ে যাক এই প্রত্যাশা করি।