শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. সুমনকে ৯০ দিনের মধ্যে সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি নাইমা হাইদার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার (১৮ জুন) এ রায় দেন।
মামলায় রিটকারী মো. সুমনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া এবং রাষ্ট্র পক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত।
আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া বলেন, রিটকারী মো. সুমনের পক্ষে সম্পূর্ণ বিনা ফি-তে আমি আইনি লড়াই করেছি। যদি ভবিষ্যতেও কখনো প্রয়োজন হয় আমি তার পক্ষে সম্পূর্ণ বিনা ফি-তে আইনি লড়াই লড়বো।
জানা গেছে, মো. সুমন একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রতিবন্ধী কোটায় নিয়োগের জন্য আবেদন করেন। পরবর্তীতে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সফলভাবে উত্তীর্ণ হন এবং অপরাপর বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ২০১৮ সালে উক্ত নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়।
যেখানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১৯৯৭ সালের ১৯ মার্চ তারিখের পরিপত্র অনুযায়ী নির্ধারিত শতকরা ১০ ভাগ প্রতিবন্ধী কোটা অনুযায়ী মো. সুমনকে সুযোগ দেওয়া হয়নি।
অথচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯ এর ৮ এর ২ বিধিতে বলা হয়েছে ‘উপ-বিধি (২) এর দফা (গ) তে উল্লেখিত মহিলা, পোষ্য ও পুরুষ কোটা পূরণের ক্ষেত্রে, আপাতত বলবৎ অন্য কোনো বিধি বা সরকারি সিদ্ধান্তে কোনো বিশেষ শ্রেণির কোটা নির্ধারিত থাকলে উক্ত কোটা সংক্রান্ত বিধান অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে।’
প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এর ধারা ৩৫ এর ১ এ বলা হয়েছে আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও, প্রতিবন্ধীতার ধরন অনুযায়ী, উপযোগী কোনো কর্মে নিযুক্ত হতে কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে বঞ্চিত বা তার প্রতি বৈষম্য করা বা তাকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। আমাদের দেশের সংবিধান এর ২৮ এর ৪ অনুচ্ছেদে প্রতিবন্ধীদের কোটার বিষয়ে বিশেষভাবে উল্লেখ আছে।
অর্থাৎ পিটিশনার নিয়োগ পরীক্ষা-২০১৪ এর ২০১৮ সালে প্রকাশিত চুড়ান্ত ফলাফলে শতকরা ১০ ভাগ প্রতিবন্ধী কোটা পূরণ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার বৈধ অধিকারী। কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের সময় উক্ত বিধিসমূহ অনুযায়ী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শতকরা ১০ ভাগ কোটা অনুসরণ না করায় রিটকারী উক্ত রিট পিটিশন দায়ের করেন। উক্ত রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে রোববার হাইকোর্ট সুমনকে ৯০ দিনের মধ্যে সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন বলে জানান আইনজীবী মো. ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া।