কুড়িগ্রাম-৪ আসনের (চিলমারী,রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা) সংসদ সদস্য এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগের কথা বলে শত শত কোটি ঘুষ বাবদ টাকা হাতিয়ে নেয়া ও মাদক সেবনের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও তুলেছেন তারা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা মো. জাকির হোসেনকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না দিতে তারা দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দারস্থ হয়েছেন।
ওই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ১৬ জন আওয়ামী লীগ নেতা দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো লিখিত আবেদনে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীকে ফের এমপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
গত বুধবার আবেদনপত্রটি দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছে বলে একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অভিযোগ পত্রটির একটি অনুলিপি দৈনিক শিক্ষাডটকমের হাতে এসেছে। তাতে চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগসহ জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার স্বাক্ষর রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে ‘দুর্নীতিবাজ, গণবিচ্ছিন্ন ও বিতর্কিত’ আখ্যা দিয়ে অভিযোগপত্রে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, সংসদ সদস্য জাকির হোসেন একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি। তিনি রৌমারী, চিলমারী ও রাজিবপুর এলাকায় ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নাম ব্যবহার করে ভূমি দখল করেছেন।
অভিযোগের তালিকায় ৩ নম্বরে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি (জাকির হোসেন) নিজে একজন মাদকসেবী এবং তার পরিবার দিয়ে এলাকায় মাদক ব্যবসা ও চোরাকারবারী নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।
প্রতিমন্ত্রীর পরিবারের অনেকে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত দাবি করে অভিযোগের ৫ নং ক্রমিকে আওয়ামী লীগ নেতারা আরো দাবি করেছেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় জাকির হোসেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের কথা বলে চিলমারী,রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার অনেক চাকরি প্রার্থীর কাছে শত শত কোটি টাকা নিয়ে চাকরি না দেয়ায় হাজার হাজার পরিবার পথে বসেছে। এসব কারণে ওই আসনের প্রায় ৯৫ ভাগ মানুষ জাকির হোসেনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ফলে দলীয় নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে বিব্রত হচ্ছেন।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পার্লামেন্টারি বোর্ড ও দলীয় সভাপতির প্রতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, কুড়িগ্রাম-৪ আসনে নৌকা মার্কায় জাকির হোসেন ব্যতিত আওয়ামী লীগের যে কাউকে মনোনয়ন দিলে দলীয় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে আসনটি দলীয় সভাপতিকে উপহার দেবেন।
আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেছেন রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই সরকার, রাজিবপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শফিউল আলম, কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মিনু, রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম শালু, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ উপকমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমসহ ১৬ নেতাকর্মী।
রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই সরকার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, অভিযোগুলো সত্য এবং আমরা সর্বসম্মতিক্রমে স্বাক্ষর করে তা দলীয় প্রধান বরাবর পাঠিয়েছি।
রাজিবপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফিউল আলম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, জাকির সাহেবের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ নেয়া, বঙ্গমাতার নামে জমি দখলসহ উল্লেখ করা সব অভিযোগ সত্য। সত্য না হলে আমরা স্বাক্ষর করতাম না।
রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম শালু দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, জাকিরের বিরুদ্ধে প্রত্যেকটি অভিযোগ সত্য। এই আসনের মানুষ তার ওপর এতটাই অতিষ্ট যে তাকে মনোনয়ন দিলে মানুষ নৌকায় ভোট দিবে না বলে সাফ জানিয়ে দিচ্ছে।
অভিযোগকারী হিসেবে নাম থাকলেও বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ওই অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেননি বলে জানিয়েছেন। তবে তারা উল্লেখিত অভিযোগের সঙ্গে একমত জানিয়ে প্রতিমন্ত্রীকে মনোনয়ন না দেয়ার দাবির বিষয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
চিলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম লিচু দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, অভিযোগপত্রটি আমি দেখিছি। সেখানে দেয়া স্বাক্ষরটি আমার নয়। তবে অভিযোগপত্রটিতে উল্লেখ করা সব অভিযোগ সত্য। আমি এগুলোর সঙ্গে একাত্মতা জানাই।
এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এমপির সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে খুদে বার্তা পাঠালেও প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য মেলেনি। তাই তার মন্তব্য জানানো সম্ভব হয়নি।