সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে সরকারি ১০ প্রকল্পের কাজ না করে টাকা আত্মসাৎ ও তিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৩ চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের নামে কোটি টাকার দুনীতির অভিযোগ উঠেছে। শেখ আব্দুল হাই পাটকেলঘাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তালা উপজেলার সরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান পদের প্রভাব খাটিয়ে তিনি কাশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বড়বিলা দাখিল মাদরাসার এবং যুগীপুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি দায়িত্ব পালন করছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, পাটকেলঘাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কাশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বড়বিলা দাখিল মাদরাসায় ১৩ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের নামে কোটি টাকারও বেশি ঘুষ নেয়া হয়েছে।
এসব দুনীতির প্রতিকার চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছে সরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ ইউপি সদস্যসহ ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ।
তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নরুল ইসলাম অভিযোগ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এক বছর আগে তিনি পাটকেলঘাটা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি দায়িত্বে ছিলেন। এর মধ্যে তাকে গোপন করে প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই তালা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসকে ম্যানেজ করে নিয়মিত কমিটি করে তার পছন্দের একজনকে সভাপতি বানিয়েছেন। পরে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ জনকে ঘুষের বিনিয়মে একইসঙ্গে নিয়োগ দেয়া হয়। আর কাশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চারজন এবং বড়বিলা দাখিল মাদরাসায় চারজন কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক কাম চেয়াম্যান শেখ আব্দুল হাই। মোট ১৩ কর্মচারী নিয়োগে এক কোটি টাকারও বেশি টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন তিনি।
এদিকে সরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থেকে শেখ আব্দুল হাই টিআর, কাবিখা, এডিবি, ওয়ান পার্সেন্টসহ অন্তত ১০ সরকারি প্রকল্পের কাজ না করে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ৫ ইউপি সদস্য। একই সঙ্গে তিনি তালা উপজেলার শাকদহা মৌজার কয়েককোটি টাকা সরকারি সম্পত্তি তার নিজের লোকদের পাইয়ে দিতে প্রভাবশালী হওয়া সত্ত্বেও ২৫-৩০ জনকে ভুমিহীন প্রত্যায়ন দিয়ে তাদের কাছ থেকে কোটি টাকারও বেশি আদায় করেছেন বলে অভিযোগ আছে। গত ৫ মে গ্রামবাসী সাতক্ষীরা-খুলনা সড়কের শাকদহে মানববন্ধন ও ঝাটা মিছিল করেন আব্দুল হাই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এসব অভিয়োগে প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সরুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই। তিনি জানান, শাকদাহ এলাকায় যারা সরকারি জায়গায় অবৈধ দখল করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি জেলা প্রশাসককে বলেছেন। তাতে লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। যেগুলো মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি। তিনি দাবি করেন, আমি কিছু লোককে ভূমিহীন সনদ দিয়েছেন মাত্র। তাছাড়া কারোর কাছ থেকে একটি টাকা আমি ঘুষ গ্রহণ করেননি। আর নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ন কবির দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, সরুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে ডিডিএলজিকে (স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক) তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন আসলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।