অনিয়মের অভিযোগে মণিরামপুরের জিএইচ পাড়দিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুরকে অফিস কক্ষ থেকে বের করে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। সেই সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) রেহেনা সুলতানাকেও একই সাথে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেওয়া হয়। ঘটনার এলাকায় বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় চলছে।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য ইউনুচ আলী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, বর্তমান ইউপি সদস্য সবুজ হোসেনের নেতৃত্বে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সকাল সাড়ে দশটার দিকে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুরসহ অন্যান্য সহকারী শিক্ষকরা অফিস কক্ষে বসা ছিলেন। ক্ষুব্ধ জনতা এ সময় প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুরের কাছে জানতে চান বিদ্যালয়ের সৃষ্ট জটিলতার সমাধান করা হয়েছে কি-না। এ সময় প্রধান শিক্ষক কোনো কথা না বলায় ক্ষুব্ধ জনতা তাকে অফিস কক্ষ থেকে টেনে-হেছড়ে বের করে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়। তাকে জানিয়ে দেয়া হয় সব সমস্যার সমাধান না করা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে আসতে পারবেননা।
জানা গেছে, প্রধান শিক্ষককে বের করে দেওয়ার পর বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে স্থানীয় লোকজন তাকে নিয়ে চন্ডিপুর গ্রামের বাড়িতে পৌছিয়ে দেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ বিদ্যালয়ের নামে রেকর্ড করা জমি থেকে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ৫ শতক এবং ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে ২ শতক জমি সভাপতি কামরুজ্জামান নিজের স্ত্রী-শ্যালকদের নামে দলিল করে দেন। যেটি সম্পূর্ণ বেআইনি বলে দাবি করা হয়। জমি লিখে দেয়ার ঘটনায় সাবেক ইউপি সদস্য ইউনুচ আলী বাদি হয়ে মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেন।
অভিযোগ রয়েছে, মাধ্যমিক কর্মকর্তা তদন্তের স্বার্থে উভয় পক্ষকে একাধিকবার হাজির হওয়ার নোটিশ দিলেও নির্ধারিত দিনে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দেখা দেননি। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে বিলম্ব করায়। যে কারনে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।
এছাড়াও সম্প্রতি বিদ্যালয়ে দিবাশীষ নামের এক যুবককে চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগ দেয়া হয়। শর্তসাপেক্ষে কর্মচারী দিবাশীষের কাছ থেকে বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা থেকে কবলা দলিল মূলে বিদ্যালয়ের নামে ৪ শতক জমি লিখে নেয়া হয়েছে। এসব ঘটনা নিয়েই ফুঁসে উঠেছেন এলাকাবাসী। যে ঘটনার জেরে মঙ্গলবার ক্ষুব্ধ জনতা বিদ্যালয় অফিস কক্ষ থেকে প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুর এবং তার স্ত্রী রেহেনা সুলতানাকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন।
জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য সবুজ হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুর বিদ্যালয়টিকে তার নিজের সম্পত্তি মনে করে খেয়ালখুশি মতো কাজ করে চলেছেন। সেই সঙ্গে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিও বিদ্যালয়টিকে নিজের সম্পত্তি বানিয়ে নিয়েছেন। আমিসহ এলাকাবাসী এর প্রতিবাদ এবং বিদ্যালয়ের সব সম্পত্তি ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলনের ডাক দিয়েছি। এছাড়া পাঁচটি গ্রামের লোকজনকে মাইকিং করে সমবেত করা হয়েছেন। যতোক্ষণ পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতি এসব ঘটনার সুষ্ঠ সমাধান না করবেন ততোক্ষণ পর্যন্ত প্রতিবাদ চলবে। প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুর এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কামরুজ্জামানের মুঠো ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তাদের ব্যবহৃত ফোন দুটি বন্ধ পাওয়া যায়।
মন্তব্য জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আগের অভিযোগ তদন্তের কাজ শেষ পর্যায়ে। খুব শিগগিরই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।