পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে মনোযোগের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন।
জার্মানির মিউনিখে স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশি গণমাধ্যমকে দেওয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। গতকাল শনিবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হাছান মাহমুদ জানান, সম্মেলনের প্রথম দিন শুক্রবার শেখ হাসিনা অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করেছেন। সাতটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও একটি প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়েছেন।
তিনি জানান, কাতার ও ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা ও ফিলিস্তিন বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক; প্রেসিডেন্ট অব উইমেন পলিটিক্যাল লিডারস; ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ‘মেটা’র গ্লোবাল চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. সায়মা ওয়াজেদকে সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক নির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানান।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে বৈঠকের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংক ৫৬টি চলমান প্রকল্পে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন করেছে। তারা এ বছর ৫০৯ মিলিয়ন ডলার বাজেট-সহায়তা এবং রোহিঙ্গা ও হোস্ট কমিউনিটির জন্য ৭০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তার অঙ্গীকার করেছে। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ দেন ও বাজেট-সহায়তা অর্থ দ্রুত ছাড়ের অনুরোধ জানান।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পর্যাপ্ত তহবিল জোগানের বিকল্প নেই : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় শক্তিশালী বৈশ্বিক অংশীদারত্ব, সমষ্টিগত পদক্ষেপ ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পর্যাপ্ত তহবিল জোগানের বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য তহবিলের জোগান ক্রমেই কমে আসছে। কিন্তু বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন ও সহনশীলতা অর্জনে এ দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত তহবিল নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
জার্মানির মিউনিখে স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় বার্ষিক আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলনের পার্শ্ববৈঠক হিসেবে আয়োজিত ‘কারণ ও প্রভাব : জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায়
দ্বিমুখী লড়াই’ শীর্ষক ফোরামে মন্ত্রী এ আহ্বান জানান। গতকাল ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।কার্বন নিঃসরণে নগণ্যতম (বৈশ্বিক নিঃসরণের ০.৪৮%) দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের সর্বোচ্চ হুমকির মুখে থাকা দেশগুলোর অন্যতম উল্লেখ করে পরিবেশবিদ ড. হাছান মাহমুদ বলেন, একইসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে একটি অনন্য উদাহরণ হিসেবেও চিহ্নিত। ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারিটি প্ল্যান’ এ ক্ষেত্রে একটি শীর্ষ পরিকল্পনা।
ফোরামে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক উদ্যোগের কথা জানান এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, দেশের উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি, উত্তরাঞ্চলে খরা, দক্ষিণাঞ্চলে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সারা দেশে বন্যার প্রকোপ মোকাবিলায় জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড, বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ এবং জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনাসহ বাংলাদেশের নীতি এবং কর্মসূচি তুলে ধরেন।
ফোরামে নরওয়ের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন মন্ত্রী অ্যান বিথ টিভিনেরিম, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলিল আব্বাস জিলানি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশমন্ত্রী মরিয়ম বিনতে মোহাম্মদ সাইদ আলমেইরি বিশ্বব্যাপী সমন্বিত প্রচেষ্টার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন।