প্রশ্ন ফাঁসের মামলায় ঢাবির ৮৭ শিক্ষার্থীসহ সব আসামি খালাস - দৈনিকশিক্ষা

প্রশ্ন ফাঁসের মামলায় ঢাবির ৮৭ শিক্ষার্থীসহ সব আসামি খালাস

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ২০ অক্টোবরে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় ৮৭ শিক্ষার্থীসহ ১২৫ জন খালাস পেয়েছেন। ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত সম্প্রতি এ রায় দেন। 

খালাস পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ২১ জন ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মী, ৮ জন চাকরিজীবী-ব্যবসায়ী এবং বিসিএস নন-ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত এক ব্যক্তিও আছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে প্রায় সাড়ে ছয় বছর আগে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলায় দুটি আইনে (আইসিটি ও পাবলিক পরীক্ষা) অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। মামলাটি তদন্ত করে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জুন ১২৫ জনের বিরুদ্ধে পৃথক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। আইসিটি আইনের মামলায় ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে অভিযোগ গঠন করা হয়।

আদালতের রায়ে বলা হয়, অভিযোগ গঠনের পর আদালতে সাক্ষীদের হাজির করতে সমন, গ্রেফতারি পরোয়ানা ও অজামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তবে রাষ্ট্রপক্ষ মাত্র একজন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করে। একমাত্র যে সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তিনিও অভিযোগ সমর্থন করে কোনো সাক্ষ্য দেননি। আইসিটি আইনের যেসব ধারায় (৫৭ ও ৬৩) অপরাধের অভিযোগ মামলায় আনা হয়, তা বিচারে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই আসামিদের বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।

রায়ে আদালত বলেছেন, একই অপরাধের অভিযোগে মামলায় পৃথক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এক অপরাধের জন্য কোনো ব্যক্তিকে একাধিকবার ফৌজদারি মামলায় বিচারের মুখোমুখি ও দণ্ডিত করা যায় না।

আইসিটি আইনের মামলাটিতে সব আসামির খালাস পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর প্রসিকিউশন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

গণমাধ্যমকর্মীদের দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল থেকে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন রানা ও অমর একুশে হল থেকে আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। দুজনের তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন ২০ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার হল থেকে ইশরাক হোসেন নামের এক পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়। একই দিন সিআইডি মামলা করে।

আদালতের রায়ে আরও বলা হয়, মামলার আসামিদের মধ্যে ৪৬ জন ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। রায়ের তথ্য বলছে, মামলার অভিযোগ, ইলেকট্রনিক বিন্যাসে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও সরকারি সংস্থার নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন। এ অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনের ৫৭ ও ৬৩ ধারায় ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠন করা হয়। অভিযোগ গঠনের দীর্ঘদিন পর ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১১ মে এক সাক্ষীকে আদালতে হাজির করে রাষ্ট্রপক্ষ। বাকি সাক্ষী হাজির না করার তথ্য উল্লেখ করে আসামিপক্ষ আদালতে আবেদন করে বলে, একই ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা চলমান। এ কারণে আইসিটি আইনের মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়া হোক।

রায়ে আরও বলেছেন, আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে মিথ্যা বা অশ্লীল কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করলে এবং প্রকাশিত বা সম্প্রচারিত আধেয় (কন্টেন্ট) কেউ পড়লে বা দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা থাকলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। প্রসিকিউশন মামলাকে শতভাগ সত্য বলে ধরে নিলেও এখানে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার অপরাধের উপাদান নেই। এ ধারায় অপরাধের ক্ষেত্রে তর্কিত আধেয় সর্বসাধারণের জন্য কোনো ওয়েবসাইট বা ইলেকট্রনিক বিন্যাসে প্রচার বা প্রকাশ করতে হবে। ফাঁস করা প্রশ্নপত্র সর্বসাধারণের জন্য ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে প্রচার করার কোনো অভিযোগ মামলায় আনা হয়নি।

আদালত আরও বলেন, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, ইমেইল, ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপে বা অন্য কোনো আবদ্ধ গ্রুপে কোনো ধরনের চ্যাটিং বা যোগাযোগ আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার অপরাধের উপাদানের মধ্যে পড়ে না। যেখানে ৫৭ ধারার অপরাধ প্রতিষ্ঠিত হয়নি, সেখানে ৬৬ ধারার অপরাধও প্রতিষ্ঠিত হয় না।

আইসিটি আইনের ৬৬ ধারায় কোনো ব্যক্তির ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কম্পিউটার, ই–মেইল, নেটওয়ার্ক, রিসোর্স বা সিস্টেম ব্যবহারের মাধ্যমে এই আইনের অধীনে কোনো অপরাধ সংগঠনে সহায়তা করার কথা উল্লেখ আছে।

রায়ে বিচারক বলেন, আইসিটি আইনের ৬৩ ধারার মূল বক্তব্য হলো, কোনো ব্যক্তি যদি এই আইন বা আইনের বিধি বা প্রবিধানের কোনো ইলেকট্রনিক রেকর্ড, বই, রেজিস্ট্রার, তথ্য, দলিল বা অন্য কোনো বিষয়ে প্রবেশাধিকারপ্রাপ্ত হয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির সম্মতি ছাড়া কোনো বিষয়বস্তু অন্য কোনো ব্যক্তির নিকট প্রচার বা প্রকাশ করেন, তাহলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তবে মহিউদ্দিন, মামুনসহ অন্য আসামিদের এ ধরনের কোনো অপরাধ করার সাক্ষ্য-প্রমাণ দেখা যায় না।

রায়ে আদালত বলেন, আসামি মহিউদ্দিনের মুঠোফোনের ফরেনসিক পরীক্ষায় সাদা কাগজে হাতে লেখা প্রশ্নোত্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র পাওয়া যায়। ফলে আসামির ডিজিটাল ডিভাইস থেকে প্রশ্নপত্র সর্বসাধারণের জন্য ওয়েবসাইট বা ইলেকট্রনিক বিন্যাসে প্রচার বা প্রকাশ করার কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই। আসামি মামুন টাকার বিনিময়ে ফাঁস করা প্রশ্নপত্রের গ্রাহক সংগ্রহ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার তথ্য জবানবন্দিতে স্বীকার করেন। পরীক্ষার হলের বাইরে থেকে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীদের উত্তর বলার তথ্যও স্বীকার করেন তিনি। মামুনের কাছ থেকে উদ্ধার করা মুঠোফোনের ফরেনসিক পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্রের ছবি পাওয়া যায়। তবে তিনি তা সর্বসাধারণের জন্য ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে প্রচার করেননি।

একইভাবে আদালত রায়ে আসামি ইব্রাহীম, অলিপ কুমার বিশ্বাস, নাভিদ আনজুম, রফিকুল হাসান, বনি ইসরাইল, হাফিজুর রহমান, সাইফুল ইসলাম, আইয়ুব আলী, আনোয়ার হোসেনসহ বেশ কয়েকজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির তথ্য আদালত রায়ে তুলে ধরেছেন। স্বীকারোক্তির তথ্য পর্যালোচনা করেছেন।

রায়ে আদালত বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষা আইনে পৃথক একটি অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে; যা ‘ডাবল জিওপ্রাডি’র (একই অপরাধের অভিযোগে কাউকে দুবার বিচারের মুখোমুখি করা) মূলনীতিকে লঙ্ঘন করে। সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, এক অপরাধের জন্য কোনো ব্যক্তিকে একাধিকবার ফৌজদারি মামলায় সোপর্দ ও দণ্ডিত করা যাবে না।

রায়ে উল্লেখ রয়েছে, রাষ্ট্রপক্ষে পিপি উল্লেখ করেন, মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার অপরাধের উপাদানকে সমর্থন করে না। মামলার কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও কোনো ধরনের ইতিবাচক ফলাফল আসার সম্ভাবনা নেই। যেহেতু আসামিদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধের কোনো উপাদান নেই, তাই মামলাটি ‘কেস অব নো এভিডেন্স’ (অভিযোগ প্রমাণের সপক্ষে সাক্ষ্যপ্রমাণ না থাকা)।

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ - dainik shiksha চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ ঢামেকে একজনের মৃত্যু - dainik shiksha ঢামেকে একজনের মৃত্যু জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ - dainik shiksha জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ - dainik shiksha বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর - dainik shiksha শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের - dainik shiksha সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো - dainik shiksha যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ - dainik shiksha সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050699710845947