বিসিএসসহ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) ও বিজি প্রেসের অর্ধশতাধিক কর্মচারী-কর্মকর্তার জড়িত। একাধিক সিন্ডিকেটে ভাগ হয়ে তারা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে পিএসসির কর্মচারী সাজেদুল ইসলাম ও গাড়িচালক আবেদ আলীসহ চক্রের সদস্যদের হাতে প্রশ্ন তুলে দিতেন। আর চক্রের সদস্যরা অর্থের বিনিময়ে সেই প্রশ্ন পরীক্ষার্থীদের পৌঁছে দিতেন। ফাঁস হওয়া প্রশ্নে চাকরি পেয়ে এখন সরকারের প্রভাবশালী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হয়েছেন- এমন ব্যক্তিও রয়েছেন। ফলে প্রশ্নপফাঁসে জড়িত এবং ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে প্রভাবশালী কর্মকর্তা হয়ে উঠায় মামলার তদন্ত থমকে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
রেলওয়ের চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার পর ১৭ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। সেই মামলায় পিএসসির সাবেক সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়সহ আরও ১৪ জনের নাম বেরিয়ে আসে। তবে গতকাল পর্যন্ত পলাতক সেই ১৪ জনের আর কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান গতকাল বলেন, চক্রে আরও কারা জড়িত এবং কীভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হতো- এসবের বিস্তারিত জানতে আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন
করেছি। শনিবার (আজ) কিংবা রবিবার রিমান্ডের শুনানি হবে। রিমান্ডের পর আরও বিস্তারিত জানা যাবে।
গাড়িচালক আবেদ আলীকে মাস্টারমাইন্ড উল্লেখ করে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় আবেদ আলীসহ পিএসসির দুই কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়। এর আগে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে মেডিক্যাল কলেজের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় আবেদ আলীর নাম আসে একাধিক সংস্থার প্রতিবেদনে। ওই সময় তাকে গ্রেফতারও করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে ওই সময় তিনিসহ জড়িত কয়েকজনকে চাকরিচ্যুত করে পিএসসি। তবে গুরু পাপে লঘুদ- পাওয়ায় আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন আবেদ আলী। পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বিজি প্রেসের কর্মচারীদেরও প্রলোভনে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়ান। তাদের এই প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে অর্ধশতাদিকের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গত এক যুগে পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়েছে মূলত পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাত ধরেই। প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে পিএসসির পরীক্ষা-শাখা (নন-ক্যাডার), তথ্য-প্রযুক্তি শাখা, ইউনিট-১২ ও পিএসসি সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ের বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম সামনে আসছে। আছে বিজি প্রেসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামও।
জানা গেছে, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন ১৭ জন। তাদের মধ্যে জবানবন্দি দিয়েছেন ছয়জন। তাদের বক্তব্যে ও জবানবন্দিতে ওঠে এসেছে প্রশ্নফাঁসে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম। তারাও বিভিন্ন সময়ে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসে জড়িত ছিলেন। তাদের মধ্যে মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তা যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন অফিস সহায়ক ও গাড়িচালকও। তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরাও জড়িত রয়েছেন। তারা পরীক্ষার বুথ পরিচালনা ও টাকা সংগ্রহ করতেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা জানান, তারা বেশ কিছু নতুন তথ্য পেয়েছেন। এগুলো যাচাই-বাছাই করছেন। তবে গ্রেফতারদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলতে পারে।