আগামী ১০ মার্চ শুক্রবার সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দারা, যাতে পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব সৃষ্টি করতে না পারে। যদি কেউ এ ধরনের গুজব রটানোর চেষ্টা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশব্যাপী পরীক্ষা চলাকালে এবং পরীক্ষার আগে ও পরে সেই ধরনের প্রস্তুতি তাদের রয়েছে।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি সংক্রান্ত ওভার সাইট কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রথিতযশা চিকিৎসকগণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা অংশ নেন।
গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, এবারের ভর্তি পরীক্ষাকে সামনে রেখে একটি গোষ্ঠী প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব রটাতে তৎপর রয়েছে, যাতে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা যায়। তবে এই গুজব যাতে না রটাতে পারে সেজন্য সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
বৈঠকে অংশ নেওয়া ওভার সাইট কমিটির সদস্যরা বলেছেন, সকল পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা শুরুর ৪৫ মিনিট বা এক ঘণ্টা পূর্বে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে হবে। এছাড়া কোচিং সেন্টার বন্ধের বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা প্রতিপালন করা হচ্ছে। রাজধানীসহ দেশব্যাপী কোচিং সেন্টার বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন এবং ফল প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো কোচিং সেন্টার খোলা যাবে না। যারা কোচিং সেন্টার খোলার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ভর্তি সংক্রান্ত ওভারসাইট কমিটির সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। এতে অংশ নেন বিএসএমএমইউর ভিসি অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ,
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (শিক্ষা) অধ্যক্ষ ডা. টিটো মিয়া, বিএমডিসির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (শিক্ষা/চিকিৎসা) অধ্যাপক ডা. এবিএম জামাল ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. বায়েজীদ খুরশীদ রিয়াজ, স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. জামাল চৌধুরী, সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, প্রভাষ আমিন, বিএমডিসির প্যানেল আইনজীবী তানজিবুল আলম প্রমুখ। বৈঠকে এবারের মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষাকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কমিটি।প্রসঙ্গত, আগামী ১০ মার্চ এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা ঢাকাসহ সারা দেশে ১৯টি কেন্দ্রে ৫৬টি ভেন্যুতে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত একযোগে ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা হবে। প্রতি বছর এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষাকে সামনে রেখে কিছু কুচক্রী, দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি বা গ্রুপ কোচিং সেন্টারের নামে বা ব্যক্তিগতভাবে অনলাইনের মাধ্যমে (ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইমো) মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির বিষয়ে ১০০ শতাংশ কমন সাজেসন্স বা গ্যারান্টি সহকারে ভর্তির কথা বলে গোপনে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করে থাকে। এ ধরনের অপতত্পরতা ঠেকাতে এবার আগে থেকেই দেশের সকল মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল সরকার। কিন্তু রাজধানীর কোচিং সেন্টারগুলো গোপনে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। আর ঢাকার বাইরের কোচিং সেন্টারগুলো প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে মোট আসন সংখ্যা ১১ হাজার ১২২টি। এর মধ্যে সরকারি মেডিক্যালে ৪ হাজার ৩৫০টি এবং বেসরকারি মেডিক্যালে ৬ হাজার ৭৭৭২টি আসন রয়েছে। বিডিএস কোর্সে মোট ১৯৫০টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ৫৫০ এবং বেসরকারিতে ১ হাজার ৪০৫টি। ১০ মার্চ এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা চূড়ান্ত হয়েছে। বিডিএস ভর্তি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ আগামী ২৮ এপ্রিল। গত বছর মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯১৫ জন। এবার পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৩৯ হাজার ২১৭ জন। কোনো পরীক্ষার্থী কেন্দ্রে মোবাইল ফোন, ক্যামেরা, কোনো ধরনের ডিভাইস নিয়ে যেতে পারবে না। মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা শুরুর ৪৫ মিনিট আগে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নারী পরীক্ষার্থীদের কান খোলা রাখতে বলা হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে প্রবেশপত্রে ভবন ও হল নম্বর থাকবে। প্রবেশপত্র বিতরণ (ডাউনলোড) আগামী ৬ মার্চ ও ৭ মার্চ। পরীক্ষায় অবতীর্ণ/নির্বাচিত কোনো প্রার্থীর দেওয়া তথ্য (যা ফলাফল নির্ধারণে বিবেচিত হয়েছে) অসম্পূর্ণ ও ভুল প্রমাণিত হলে, তার পরীক্ষা/ফলাফল/ভর্তি বাতিল বলে গণ্য হবে। যে কোনো বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।