ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অপার সংস্কারের আশা জাগিয়ে গত ৮ আগস্ট গঠিত হয়েছিলো অন্তর্বর্তী সরকার। গত ৮ নভেম্বর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন ওই সরকারের তিন মাস পূরণ হয়েছে। এই তিন মাসে দেশবাসীর স্বপ্নপূরণে কী কী উদ্যোগ নেয়া হলো? সেগুলোর কতোগুলো বাস্তবায়িত হলো? বাস্তবায়নের পথেইবা এখন কতোগুলো উদ্যোগ? দেশবাসী প্রশ্ন তোলার আগেই এসব হিসাবের চুলচেরা বিশ্লেষণের চেষ্টা খোদ সরকারই করে দিয়েছে। গতকাল রোববার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো সরকারি হিসেবের শিক্ষা বিষয়ক নির্বাচিত অংশ দৈনিক আমাদের বার্তার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি স্থগিত করে এডহক কমিটি গঠনের নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। আসন্ন ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাথমিক স্তরের ১ম, ২য় ও ৩য় শ্রেণির ২০টি প্যাকেজে মোট ৯৮টি লটের মধ্যে ৭০টি লটের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ (কাগজসহ), বাঁধাই ও সরবরাহের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। অবশিষ্ট শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের জন্য দরপত্রও আহবান সম্পন্ন হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য মোট ৫ হাজার ১৬৬টি শিক্ষকের পদ সৃজন আদেশ জারি করা হয়েছে। ৪০তম বিসিএস থেকে সুপারিশপ্রাপ্ত ২০৮ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে প্রধান শিক্ষক পদে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে এমন আরো অনেক অগ্রগতির কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ছাড়ার পর গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয়া সরকারের তিন মাস পূর্তি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে এসব অগ্রগতির খবর পাঠানো হয়েছে।
ওই নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়, প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং উপানুষ্ঠানিক ব্যুরোর আওতাধীন লার্নিং সেন্টারগুলো পাঠ কার্যক্রম পুরো চালুর লক্ষ্যে গত ১৩ আগস্ট নির্দেশনা জারি করে সরকার। ১৮ আগস্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাস্তাবায়নাধীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পরিবীক্ষণের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে জেলাভিত্তিক মনিটরিং টিম গঠন করে।
গত ১৯ আগস্ট সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পিটিআই-এর প্রাত্যাহিক সমাবেশকালে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর পঠিতব্য শপথবাক্যের ভাষ্য সংশোধন করে জারি করে। ২১ আগস্ট বিদ্যমান পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি স্থগিত করে এডহক কমিটি গঠনের লক্ষ্যে পত্র জারি করে।
গত ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের পাঠ্যক্রম অনুসারে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রস্তুতকৃত পাঠ্যপুস্তকের পাণ্ডুলিপি এবং মূল্যায়ন-পদ্ধতি সংশোধন ও পরিমার্জনের লক্ষ্যে এনসিটিবি এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে পাণ্ডুলিপি ও মূল্যায়ন-পদ্ধতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর দুর্দশাগ্রস্ত জনগণকে মানবিক সহায়তা দিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের এক দিনের বেতনের অর্থের সমপরিমাণ বিশ কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে জমা প্রদান করা হয়েছে। ৪০তম বিসিএস থেকে সুপারিশপ্রাপ্ত ২০৮ জনকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগও দিয়েছে সরকার।
প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও শিখন পদ্ধতির উৎকর্ষ সাধনে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞ এবং প্রাথমিক শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে কনসালটেশন কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক পদ হতে ৭ জনকে উপপরিচালক পদে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার হতে ১৫৫ জনকে উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের অপারেশন ম্যানেজার ও সিস্টেম এনালিস্ট পদে ২ জনসহ সর্বমোট ১৬৪ জনকে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইসিটি ও হিসাব শাখার ৫টি পদ স্থায়ীকরণ করা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আইন অনুবিভাগ সৃজনের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়কে ছোট ক্যাটাগরি হতে বড় ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্তকরণের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৩৭টি নন-ক্যাডার পদ সৃজনের নিমিত্ত সার-সংক্ষেপসহ প্রস্তাব প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য সহকারী শিক্ষক (সংগীত) ২ হাজার ৫৮৩টি ও সহকারী শিক্ষক (শারীরিক শিক্ষা) ২ হাজার ৫৮৩টিসহ মোট ৫ হাজার ১৬৬টি শিক্ষকের পদ সৃজন আদেশ জারি করা হয়েছে।
সারাদেশে ১৫০টি উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে খাদ্য সরবরাহ করার লক্ষ্যে সর্বমোট ৪ হাজার ৫৩১ কোটি টাকার প্রাক্কলিত ব্যয় সংবলিত প্রস্তাবিত প্রকল্প ‘সরকারি স্কুল ফিডিং কর্মসূচি’ এর উপর গত ৫ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ২০২৩’ এর ৩য় গ্রুপের (ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) নিয়োগযোগ্য শূন্য পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের ফলাফল প্রকাশ ও চূড়ান্ত নিয়োগের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
৩১ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে এ মন্ত্রণালয় হতে সারাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নসহ প্রাথমিক শিক্ষাকে আরও বেগবান করার লক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণায় ও অধীনস্ত দপ্তরসমূহের কর্মকর্তাগণ কর্তৃক প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দপ্তরসমূহ পরিদর্শন কার্যক্রম গতিশীল ও কার্যকরভাবে সম্পাদনের জন্য পরিদর্শন নির্দেশিকা ২০২৪, অনুমোদন করা হয়েছে।
এছাড়াও ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাথমিক স্তরের (১ম, ২য় ও ৩য় শ্রেণির) ২০টি প্যাকেজে মোট ৯৮টি লটের মধ্যে ৭০টি লটের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ (কাগজসহ), বাঁধাই ও সরবরাহের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। অবশিষ্ট শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের জন্য দরপত্র আহবান সম্পন্ন হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য সহকারী শিক্ষক (সংগীত) ২,৫৮৩টি ও সহকারী শিক্ষক (শারীরিক শিক্ষা) ২,৫৮৩টি সহ মোট ৫,১৬৬টি শিক্ষকের পদ সৃজন আদেশ জারি করা হয়েছে।