দৈনিক শিক্ষাডটকম, পঞ্চগড় : পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিউবওয়েলের ভেতরে বিষ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
তবে এ বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের না হলেও উপজেলা প্রশাসন বলছে ঘটনার বিষয়টি অধিকতর তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ঘটনার পর সরেজমিনে বিষয়টি জানতে গেলে সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেকটাই কম লক্ষ্য করা গেছে। এর আগে গত রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলার দণ্ডপাল ইউনিয়নের মৌমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, বিদ্যালয়ের টিউবওয়েলে কে বা কারা কীটনাশক প্রয়োগ করেছে। রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ওই টিউবওয়েলের পানি পান করকে গিয়ে আনন্দ নামে চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বিষাক্ত দুর্গন্ধ পেয়ে শিক্ষকদের অবগত করলে টিউবওয়েলটি সাময়িক বন্ধ করে দেয়া হয়। বিষয়টি বিদ্যালয়সহ পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করে।
এদিকে এ ঘটনায় আতঙ্কে সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেকটাই কম লক্ষ্য করা গেছে।
আরও জানা গেছে, ১৯৩১ সালে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার দণ্ডপাল ইউনিয়নে স্থাপিত হয় মৌমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রাক প্রাথমিক থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় তিন শতাধিক শিশু শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত রয়েছে বিদ্যালয়টিতে।
কথা হয় বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আনন্দের সঙ্গে। আনন্দ বলে, আমাদের বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী টিফিন টাইমে টিউবওয়েলের পানি নিতে যায়। এসময় তারা পানিতে ফেনা ও দুর্গন্ধ পায়। এসময় আমি পাশে থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে পানি দেখে তাদের খেতে নিষেধ করে স্যারদের জানাই। পরে স্যার ও ম্যাডামরা এসে বিষের গন্ধ পায়।
এদিকে শিশু শিক্ষার্থী দৃষ্টি রানী ও সৌরভ বলেন, ঘটনার পর থেকে আমরা টিউবওয়েলের পানি খেতে পারছি না। আমাদের বাবা-মায়েরা ভয়ে আছে। আমরা অনেকেই বাড়ি থেকে পানি এনেছি। আবার স্যার-ম্যাডাম বাইরে থেকে পানি বালতিতে এনে রেখেছেন আমাদের জন্য। আজ আমাদের স্কুলে অনেক শিক্ষার্থী কম এসেছে। অনেকেই ভয়ে আসেনি।
মৌমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রোশন আক্তার বলেন, সব শিক্ষার্থী ভয়ে আছে, সঙ্গে অভিভাবকরাও। না জানি কে কখন কোন বিপদে পড়ে যায়। তবে আমরা অনেকদিন ধরে লক্ষ্য করছি রাতে বিদ্যালয়ের বারান্দায় অবস্থান নেয় মাদক সেবনকারীরা। তারা দীর্ঘসময় অতিবাহিত করেন এখানে, মূলত তারাই এ ঘটনাটি ঘটাতে পারে। আমরা এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। পুলিশ প্রশাসন বিদ্যালয়ে এসে টিউবওয়েলটি বন্ধ রেখেছে।
অভিভাবক ও স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, দুর্বৃত্তরা যে ঘটনা ঘটিয়েছে এটি ন্যাক্কারজনক। আমাদের এই শিশু শিক্ষার্থীরা কি দোষ করেছে। যদি এই পানি খেয়ে আমাদের কোনো শিক্ষার্থী মারা যেত তা হলে কি একটা অবস্থা তৈরি হত ভেবেই ভয় লাগছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের কঠোর বিচার দাবি করছি।
দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফুল আলম বলেন, এ ঘটনায় কিছু আলামত সংগ্রহ করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এবং পুলিশ একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে।
এদিকে বিষয়টি তদন্তে ঘটনার দিন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটির দেয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তদন্তের পর জড়িতদের শনাক্ত করা হবে।