দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিতে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সঠিকভাবে দূরত্ব যাচাই-বাছাই না হওয়া, ভুয়া তথ্য দিয়ে সুবিধাজনক বদলিসহ নানা অসংগতি দেখা দিয়েছে এ কার্যক্রমে।
এর ফলে কাঙ্ক্ষিত বদলি বঞ্চিত হচ্ছেন সারাদেশের অসংখ্য শিক্ষক। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বদলি প্রত্যাশী শিক্ষকদের। দৈনিক শিক্ষাডটকম’র বিশেষ অনুসন্ধানে এমন অনেক তথ্য উঠে এসেছে।
এদিকে এসব ঘটনায় হতবাক ও ক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষকেরা। কিন্তু এর দায় সিনিয়র কর্মকর্তারা চাপাচ্ছেন জুনিয়রদের ওপর। আর জুনিয়ররা চাপাচ্ছেন সিনিয়রের ওপর।
শিক্ষকরা বলছেন, ডিজিটাল বদলির কারণে শিক্ষকের হয়রানি বেড়েছে। বদলির জন্য যে সফটওয়্যার করা হয়েছে, সেটি ঠিকভাবে কাজ করে না। এ বদলি পদ্ধতিও দুর্নীতি আর শিক্ষকের হয়রানি কমাতে পারেনি।
জানা যায়, কোনো স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনগড়া দূরত্ব দিয়ে অনলাইনে তথ্য সাবমিট করেন আর সেটাই সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফরোয়ার্ড করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই এই আবেদনটি ফরোয়ার্ড করে দেন। একজন শিক্ষক স্থায়ী ঠিকানার বিপরীতে চাকরি করেও অনলাইনে ভুল তথ্য দিয়ে অন্যত্র বদলি হয়, যা বদলি নীতিমালা ভঙ্গের কারণ বলে জানা গেছে।
সঠিক বদলিবঞ্চিত ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার শিক্ষক মো. মোবাশ্বের হোসেন জানান, এই অনিয়ম চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এর ফলে প্রাথমিক শিক্ষকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। শিগগিরই এর প্রতিকার চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো এক শিক্ষক জানান, মিথ্যা তথ্যের বিষয়টি বদলি নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ব্যাপারে উচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এদিকে এই অনিয়মের ব্যাপারে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আক্তার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার যেটা দিয়েছে এপ্রুভ করে সেটাই আমাকে দিতে হবে, কিছুই করার নেই।
তিনি বলেন, দূরত্বের বিষয়টি আমার থেকে সহকারী শিক্ষা অফিসার ও প্রধান শিক্ষক ভালো জানেন, তাই তাদের মন্তব্যের ভিত্তিতে আমি আবেদন এপ্রুভ করি। যদি কোনো আবেদনে মন্তব্য এবং দূরত্বের বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হয়, সেক্ষেত্রে আমি নিজেই গুগলের সাহায্য নিয়ে মন্তব্য করে দেই।
তবে প্রার্থীদের আবেদনের পরে সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই বলে এখানে আমার কিছুই করার থাকে না। আবেদনে যদি ভুল তথ্য থাকে সে দায় আমার না বলেও জানান কর্মকর্তা।
‘মন্তব্য এপ্রুভ করার পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিবেন, এখানে আমার কিছুই করার নেই,’ যোগ করেন তিনি।
প্রাথমিকের শিক্ষক বদলি নীতিমালায় দেখা যায়, একজন শিক্ষক প্রথমে অনলাইনে বদলির আবেদন করলে তা প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনিও আবেদনটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে যাচাই করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি সেটি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার (ডিপিইও) কাছে। ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠিয়ে দেবেন আবার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি বদলির বিষয়ে আদেশ জারি করবেন। এরপর শিক্ষক বদলির বিষয়টি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
তিন ধাপের এই যাচাইয়ে প্রত্যেক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তিনদিন করে সময় পাবেন। এই তিনদিনের মধ্যে যাচাই করে নিষ্পত্তি না করলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাচাইয়ের জন্য নিয়োজিত পরবর্তী ব্যক্তির কাছে চলে যাবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিপিইর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলছেন, সফটওয়্যারে কোনো ধরনের ত্রুটি ধরা পড়েনি। কোনো কর্মকর্তা অনিয়ম-দুর্নীতি করেছে এমন প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। বদলির জন্য কেউ আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন এমন প্রমাণ পাওয়া গেলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের অনলাইনে বদলির আবেদন শুরু হয় গত ৩০ মার্চ। ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত এ আবেদন চলবে বলে জানানো হয়।