আমাদের এই দেশটিতে প্রাথমিক শিক্ষকরা তথাকথিত অনেক লোভনীয় বিশেষণে ভূষিত হলেও বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। শিখনকাজ পরিচালনায় সরাসরি কর্মরত শিক্ষকরা শুধু বঞ্চিতই নন, বরং অসম্মানিতও বটে। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও নিয়োগ বিধির দোহাই দিয়ে আমাদের অপমানের ষোলোকলা পূর্ণ হয়েছে।
সব বাধা অতিক্রম করে এখন ১০ম গ্রেড প্রাপ্তি আমাদের দাবি নয়, বরং ন্যায্য অধিকার। প্রধান শিক্ষক পদে প্রমোশন না দেয়ার যৌক্তিকতা কারো বোধগম্য নয়। অথচ বিগত পনের বছর যাবত মামলার অজুহাতে আমরা অসহায়ের মতো পদোন্নতিহীনতার শিকার, যখন প্রায় ৩৫ হাজার প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। আইনগত সমস্যা যদি সত্যি হয়, তবে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একটি সিদ্ধান্ত ও অ্যাটর্নি জেনারেলের এক ঘণ্টার উপস্থিতি এই বিষয়টির সমাধানে যথেষ্ট হতে পারে।
অন্যদিকে, সম্প্রতি সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টির প্রজ্ঞাপন দেখে আমরা মর্মাহত। আমাদের হৃদয়ের অসহনীয় রক্তক্ষরণ নিয়ে যখন আমরা সমস্বরে কথা বলছি, তখন এই পদ সৃষ্টি পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে। মনে পড়ছে নজরুলের চিঠির সেই অংশ, যেখানে তিনি বলেছেন, ‘ভিক্ষা যদি কেউ তোমার কাছে চাইতেই আসে, অদৃষ্টের বিড়ম্বনায়, তাহলে তাকে ভিক্ষা নাই-ই দাও, কুকুর লেলিয়ে দিও না।’
এ অবস্থায়, প্রস্তাবিত সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ বাতিল করে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের বৈষম্য নিরসনে কার্যকরী সিদ্ধান্ত এবং নির্দেশনার প্রত্যাশা করছি। শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত পাঠদান শেষে অধরা সম্মান ও সম্মানীর ন্যূনতম নিশ্চয়তা প্রাপ্তির আশায় আমরা এই আহ্বান জানাচ্ছি।
লেখক: সহকারী শিক্ষক
(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)