প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি সম্পর্কে পর্যালোচনা করতে একটি গল্পের খানিকটা উপস্থাপন করা হলো। ব্রিটিশ শাসন আমলে ইংরেজ বড় সাহেব এক রাস্তাঘাটবিহীন গ্রামে এসেছিলেন। তার উদ্যোগে গ্রামের সঙ্গে শহরের যাতায়াতসহ গাড়ি চলার পথ সুগম হলো। এর ফলে গ্রামের জনসাধারণ তাদের উৎপাদিত মালামাল অনায়াসে শহরে বিক্রি করে উপকৃত হয়েছিলেন।পাশাপাশি ইংরেজ সাহেব গ্রাম ত্যাগ করার সময় একজন কৃষকের সুন্দরী স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে গেল। কৃষক আক্ষেপ করে বিলাপ করে কাঁদতে কাঁদতে বললো, এ রাস্তা তো আমরা চাইনি। যে রাস্তা আমার পরিবারের সুখ-শান্তি নষ্ট করেছে ও সারা গ্রামবাসীর মুখে চুনকালি মেখে দিয়েছে।
অনুরূপভাবে স্বল্প সময়ে অনুষ্ঠিত প্রাথমিকে এ বৃত্তি পরীক্ষা নোট-গাইডের ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে ২য় শ্রেণি থেকে নোট গাইড। এমন কী শতভাগ নিশ্চয়তা বিধান করে প্রাথমিকের বৃত্তি গাইড শিক্ষার্থীর মাঝে পৌছে গেছে। কয়েক বছর আগে ৫ম শ্রেণির বাংলা বইয়ের শুরুতে গল্প ছিলো, আমাদের দেশ। সে গল্পে একটা চমৎকার লাইন ছিলো ‘নদীর সঙ্গে আমাদের গভীর মিতালি’। বাস্তবে নদী, জলাশয়ে ময়লা আবর্জনা বা মাটি ফেলে ভরাট করে আমরা সে মিতালির বন্ধন ছিন্ন করে চলেছি। ছোট শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ব্যবস্থা যেখানে অনেকটা কমিয়ে অভিজ্ঞতা ভিত্তিক জ্ঞান অর্জনমুখী মূল্যায়ন ব্যবস্থা দিকে আমরা পথ চলতে শুরু করেছি। সেখানে দেশের শিক্ষাবিদ তথা শিশু মনোবিজ্ঞানীদের পরামর্শ উপেক্ষা করে ধারাবাহিক মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে দাঁড় করানো যুক্তি থাকতে পারে না। আমাদের দেশের পেশাজীবীরা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা নিয়ে তাদের কাজকে সমৃদ্ধ করবেন। যেমন, কামারের কাজ কুমারের নয়। শিক্ষকতার কাজ শিক্ষিত যুবকদের নয়।করবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক।শিক্ষকতায় অভিজ্ঞতালদ্ধ জ্ঞান কাজে লাগানোর প্রয়াসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পর্যন্ত পদোন্নতি দেওয়া প্রয়োজন। এখানে সংশ্লিষ্টদের হীনমন্যতা ও হৃদয়হীনতা দু:খজনক।
শিশুশিক্ষা নিয়ে পরামর্শ নিতে হবে শিশু মনোবিজ্ঞানীসহ শিক্ষাবিদদের। তাদের গবেষণালদ্ধ নির্দেশনাকে উপেক্ষা করা নিছক মূর্খতা ব্যতিরেকে কিছু নয়।
জাতীয় শিক্ষানীতিতে ২০১০ এ প্রাথমিক শিক্ষার স্তর নির্ধারণ করা হয়েছে ১ম শ্রেণি-৮ম শ্রেণি পর্যন্ত। অবৈতনিক শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়ন হলে তৃণমূলসহ সর্বস্তরে শিক্ষার্থী অবৈতনিক শিক্ষা পাবেন। সবাইকে উপবৃত্তি প্রদান করা হলে এ মেধা যাচাই নামক ‘সর্বনাশ’ বৃত্তির প্রয়োজন হবে না। সকলের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে হবে। সকলের কাছে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা সমানভাবে পৌঁছাতে হবে।শিশুশিক্ষায় সবার সার্বিক জ্ঞান অর্জনবিহীন নিছক প্রতিযোগিতা বন্ধ হোক। মুখস্থ বিদ্যা, নোট গাইডের প্রসার, কোচিং সেন্টার সমাদৃত হোক, এমন বৃত্তি পরীক্ষা কাম্য নয়..এ প্রত্যাশায়। জয় বাংলা।
লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান, সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।