মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দাতাদের অনুপ্রবেশকারী এবং ধর্মীয় প্রোপাগান্ডায় প্রভাবিত বলে মনে করছেন ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা।
ছাত্রলীগ নৈতিক শক্তিকে বলীয়ান দাবি করে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, প্রয়োজনে ছাত্রলীগে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে।
এ দিকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার ও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল পান্থ বলেছেন, এই তালিকা আরও বাড়বে।
গত বুধবার চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ৩ নেতাকে অব্যাহতি দেওয়ার মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় অব্যাহতি ও বহিষ্কার চলছে। শনিবার বরিশালের উজিরপুরে বামরাইল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান শান্ত, সদস্য সাইদ ফকির, গুঠিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাজু হাওলাদার, গুঠিয়া আইডিয়াল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তাইজুল ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়।
একই দিনে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ভাদুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ হোসেন, গত শুক্রবার যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মারুফ হোসেন, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান, ইমন সরদার, উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক সোহাগ শরিফ ও নিজামকান্দি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সোহাগ মোল্লাকে বহিষ্কার করা হয়।
এ ছাড়া চট্টগ্রামের লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ায় আরও ২১, জামালপুরে ১৯, নরসিংদীতে ৬, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৭, গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় ১, কাশিয়ানীতে ৬, সাতক্ষীরায় ৩, পাবনায় ৭, ময়মনসিংহের নান্দাইলে ৩, বরিশালে ৪, পটুয়াখালীর মুরাদিয়ায় ১, কক্সবাজারের পূর্ব বড় ভেওলায় ৩ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া নেত্রকোনার কলমাকান্দায় ১ জনকে শোকজ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সাফাই গাওয়া বা অন্য সুযোগ আমাদের সংগঠনে নেই। আমরা ইতোমধ্যে সব সাংগঠনিক ইউনিটগুলোকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি। প্রয়োজনে ছাত্রলীগ শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করব।’
কেন এমন ঘটনা ঘটছে এ প্রশ্নে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘অনুপ্রবেশের কিছু ঘটনা ঘটেছে। আবার ধর্মান্ধ গোষ্ঠী আমাদের পবিত্র ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার একটা চেষ্টা সবসময় থাকে। ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করার প্রভাব দলমত নির্বিশেষে তারা রাজনীতিতে সংক্রমিত করার চেষ্টা করছে। আমরা মনে করি, আমরা ছাত্রলীগ নৈতিক শক্তিকে বলীয়ান। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সাফল্যমণ্ডিত করতে ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। কিছু ঘটনা ঘটছে, আমরা এড্রেস করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আদর্শের প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়।’
ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বাহাউদ্দীন নাসিম বলেন, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী একজন কুখ্যাত রাজাকার, কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী এবং সাম্প্রদায়িক মানুষ। তাকে নিয়ে ছাত্রলীগের একজন প্রাথমিক সদস্যও যদি কথা বলে, বুঝতে হবে তার ভেতরে জাতির পিতার আদর্শ বিন্দুমাত্র কাজ করছে না। আদর্শহীন, নীতিহীন ও সুবিধাবাদীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত খুবই ভালো। এদের জায়গা ছাত্রলীগে হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে অপরাজনীতি, মিথ্যাচারের রাজনীতি ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে শুরু হয়েছে। এই অপসংস্কৃতির ধারাবাহিকতার ফসল হলো সাঈদীর মত যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কথা বলা। অনেকে মনে করে চাঁদে সাঈদীকে দেখা যায়, ভূমিকম্প সাঈদীর মৃত্যুতে হয়েছে। এই অপপ্রচারেও মানুষ প্রভাবিত হয়। এগুলো ক্ষণিক। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় ছাত্রলীগে কিছু সুযোগ সন্ধানী, অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। এদের কেউ কেউ অনৈতিক কারণে জায়গা করে দিয়েছে। তাই ধরা পড়লে এদের সবাইকে আমরা বের করে দেই। আমাদের নীতি আদর্শ এখনও বজায় আছে।’