ফাঁস হওয়া প্রশ্নে ১১তম হয়ে চিকিৎসক হন লামিয়া - দৈনিকশিক্ষা

ফাঁস হওয়া প্রশ্নে ১১তম হয়ে চিকিৎসক হন লামিয়া

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস ও ফাঁসকৃত প্রশ্নে পরীক্ষা দেয়ার অভিযোগে খুলনা থেকে ৫ চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতারকৃতরা হলো- ডা. মো. ইউনুচ উজ্জামান খাঁন তারিম (৪০), ডা. লুইস সৌরভ সরকার (৩০), ডা. মুসতাহিন হাসান লামিয়া (২৫), ডা. শর্মিষ্ঠা মন্ডল (২৬) ও ডা. নাজিয়া মেহজাবিন তিশা (২৪)।

খুলনার চার চিকিৎসক সিআইডির কাছে কেন, জানতে চেয়ে সোমবার (২১ আগস্ট) দুপুরে পরিবারের করা সাংবাদিক সম্মেলনের কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই সন্ধ্যায় তাদের গ্রেফতারের কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাংবাদিকদের জানায় পুলিশের বিশেষায়িত এ তদন্ত সংস্থাটি।

জানা গেছে, গ্রেফতারডা. মো. ইউনুচ উজ্জামান খাঁন তারিম চিকিৎসা সেবা বাদ দিয়ে কোচিং ব্যবসায় জড়ান। খুলনা শহরের থ্রি ডক্টরস নামে মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে নিজেকে চিকিৎসক তৈরীর কারিগর হিসেবে পরিচয় দিলেও আসেলে তিনি মেডিক্যাল প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে অবৈধভাবে শত-শত শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সরকারী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। তিনি ও তার স্ত্রীর একাউন্টে প্রায় ২৫ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পেয়েছে সিআইডি। হাসপাতাল, ফ্ল্যাট, জমি, মাছের ঘের ও হোটেল শেয়ারসহ হয়েছেন বিপুল সম্পদের মালিক।

এছাড়াও গ্রেফতারকৃত ডা. মুসতাহিন হাসান লামিয়া, ডা. শর্মিষ্ঠা মন্ডল ও ডা. নাজিয়া মেহজাবিন তিশা থ্রি ডক্টরস নামে মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন। তারা ২০১৫-১৬ সেশনে ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে মেডিক্যালে চান্স পান।

এরমধ্যে লামিয়া মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় ১১তম স্থান অর্জন করে। তাকে বাসায় প্রাভেটও পড়াতেন ডা. তারিম। এর আগে গত ২০২০ সালের জুলাই মাসে জসিম উদ্দিন ও অক্টোবর মাসে আবদুস সালাম নামে দুজনকে মেডিক্যাল প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।

এ ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিরপুর থানায় মামলা হয়। তার তদন্তে নেমেই মেডিক্যাল কলেজ ভর্তি পরীক্ষা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চলতি বছরের গত ৩০ জুলাই থেকে ৯ আগস্টের মধ্যে ৭ চিকিৎসকসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি।

মেডিক্যাল শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রেস স্টাফ আব্দুস সালাম ও তার চাচাতো ভাই জসিম উদ্দিন মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং সেন্টারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রশ্নফাঁস চক্র গড়ে তোলে। সম্প্রতি গ্রেফতারকৃত ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদেই এই ৫ জনের নাম বেরিয়ে আসে। এরই মধ্যে ৫ জনকে ১৮ আগস্ট হেফাজতে নিলেও সিআইডি বিষয়টি এতোদিন স্বীকার করেনি।

এরই মধ্যে খুলনা বিএমএ ভবনে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সংবাদমাধ্যমের সামনে চিকিৎসকের পরিবার জানায়, গত ১৮ আগস্ট ভোরের দিকে কয়েকজন সিআইডি পরিচয়ে তাদের বাড়িতে যান। ওই দলের সঙ্গে ২ নারী সদস্যও ছিলেন। পরে ওই চার চিকিৎসককে এক ধরনের জোর করে সাদা মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু কেন ও কী কারণে তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা জানানো হয়নি। তাদের কাছে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানাও ছিল না।

অভিভাবকরা আরো জানান, চিকিৎসদের নিয়ে যাওয়ার সময় যোগাযোগ করার জন্য একটি মুঠোফোন নম্বর দিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু ওই নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কেউ ফোন ধরেনি। অভিভাবকরা জানান, তাদের সন্তানরা খুবই মেধাবী। তদের বিরুদ্ধে যে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ করা হচ্ছে তা সত্য নয়। ওই চার চিকিৎসক থ্রি ডক্টরস নামের একটি মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং সেন্টারে কোচিং করেছেন বলে জানান অভিভাবকরা।

সিআইডির গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদেই এদের বিষয়ে জানা যায় ও তাদের সিআইডি হেফাজতে নেয়া হয়। গ্রেফতারকৃত ডা. ইউনুচ উজ্জামান খাঁন তারিম খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা পেশা বাদ দিয়ে থ্রি ডক্টরস নামে মেডিক্যালে ভর্তি কোচিং সেন্টার গড়ে তোলেন। তিনি নিজেকে চিকিৎসক তৈরীর কারিগর হিসেবে পরিচয় দিলেও মেডিক্যাল প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে অবৈধভাবে শত-শত শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সরকারী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করিয়ে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তারিম ও তার স্ত্রীর একাউন্টে প্রায় ২৫ কোটি টাকার লেনদেন পাওয়া গেছে।

ডা. লুইস সৌরভ সরকার খুলনা মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। খুলনা শহরের আলোচিত মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং সেন্টার থ্রি ডক্টরস এর শিক্ষক। বর্তমানে একটি বেসরকারী এনজিওতে মেডিক্যালে অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকলেও প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ছিল সে।

এদিকে গত ২০১৫-১৬ সেশনের মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় ১১তম স্থান অর্জন কারী ডা. মুসতাহিন হাসান লামিয়া খুলনা থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের পরিচালক তারিমের স্পেশাল ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।

এছাড়াও তাকে বাসায়ও পড়াতো সে। কম মেধাবী হওয়ার পরও তারিমের কাছ থেকে প্রশ্ন পেয়ে তিনি মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছেন। তারিমের ঘনিষ্ঠজন ও তৎকালীন কোচিংয়ের ৩ জন শিক্ষক তার বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিয়েছেন। জাতীয় মেধায় ১১তম হওয়ার পরও সে ৪টি ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষায় সব বিষয়েই ফেইল করেছে। পরবর্তীতে একাধিকবারের চেষ্টায় সে পাশ করেছে।

লামিয়ার প্রশ্ন পেয়ে চান্স পাওয়ার বিষয়টি খুলনার চিকিৎসক মহলে ওপেন সিক্রেট। লামিয়ার ভর্তি জন্য তার স্বামী শেখ ওসমান গনি ও ডা. তারিমের মাঝে প্রায় ১৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়া ডা. শর্মিষ্ঠা মন্ডল ও ডা. নাজিয়া মেহজাবিন তিশা উভয়েই ২০১৫-১৬ সেশনের মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় তারিমের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্র ক্রয় করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়।

গ্রেফতার ব্যক্তিদেরকে মিরপুর মডেল থানার অধীণে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের - dainik shiksha ‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক - dainik shiksha পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন - dainik shiksha প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030391216278076