যুক্তরাজ্যে স্কুল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে অংশ নেয়া অনেকটাই বিরল। চার বছর আগে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ে উদ্বেগ তুলে ধরতে স্কুল শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে যুক্তরাজ্য এবং বিশ্বজুড়ে একত্রিত হয়েছিল।
গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে গত শুক্রবার যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অংশে বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয়। খবর বিবিসির।
কর্মসূচিতে ঠিক কী পরিমাণ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল তা সুনির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও আপাত দৃষ্টিতে সংখ্যাটা খুব বেশি নয় বলে মনে হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা ক্লাস বাদ দেবে কি না তা নিয়ে চলা বিতর্কের মধ্যেই শিক্ষার্থীরা ক্লাস বাদ দিয়ে ফিলিস্তিনপন্থী কর্মসূচিতে অংশ নিল।
'শিশু হত্যা বন্ধ করুন' লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করে তারা।
গত শুক্রবার, লন্ডনের হ্যারো ও রেডব্রিজে , ম্যানচেস্টার, গ্লাসগো, ব্রিস্টল, বার্টন, স্টাফোর্ডশায়ারে এসব বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচির আয়োজন করে 'স্টপ দ্য ওয়ার' জোট।
খুবই অল্প বয়সী থেকে শুরু করে কিশোর বয়সের শিক্ষার্থীরা তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে এসব কর্মসূচিতে অংশ নেয়।
ব্রিস্টোলের স্কুল শিক্ষার্থীরা গত শুক্রবার সিটি কাউন্সিলের প্রতিনিধিদের কাছে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি আবেদন দিয়েছে।
গ্রিন পার্টির সহ-নেতা ও স্থানীয় কাউন্সিলর কার্লা ডেনিয়ার শিক্ষার্থীদের এ আবেদন গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, '(হামাসের) নৃশংসতা জবাব কোনোভাবেই বেসামরিক লোকদের উপর বোমাবর্ষণকে সমর্থন করে না। গাজায় নিহত বেসামরিক লোকদের মধ্যে অনেক শিশু রয়েছে, যা বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছে ।'
গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের উপর নজিরবিহীন হামলা শুরু করে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এতে প্রায় এক হাজার দুই শ মানুষ নিহত হয়। হামাসের হাতে জিম্মি হয় দুই শরও বেশি মানুষ।
জবাবে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। পরে গাজায় স্থল অভিযানও শুরু হয়।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, টানা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এ হামলায় সাড়ে চার হাজারেরও বেশি শিশুসহ ১২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
শুক্রবার বার্টন আপন ট্রেন্টে ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভে অংশ নেয়া ১০ বছর বয়সী ইয়াহিয়া বলে, 'আমি এখানে এসেছি কারণ নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছে। তাদের বেশিরভাগই শিশু। সচেতনতা বাড়াতে আমাদের তাদের সমর্থন করা প্রয়োজন।'
বিক্ষোভ হয়েছে লন্ডনের লুটন শহরেও। অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসে শিক্ষার্থীরা এক বিক্ষোভে অংশ নেয়। স্টপ দ্য ওয়ার জানিয়েছে, অন্তত ৪০০ স্কুল শিক্ষার্থী ও ১০০ তরুণ এ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল।
গত মাসে লন্ডনের ওয়েস্ট মিনিস্টার শহরে অবস্থিত ট্রাফালগার স্কয়ারে একটি ইসরায়েলপন্থী বিক্ষোভে বিক্ষোভকারীরা নিখোঁজদের ছবি প্রদর্শনের পাশাপাশি হামাসের হাতে জিম্মিদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের আহ্বান জানায়।
স্কুল বাদ দিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেয়া শিশুদের নিয়ে 'গভীর উদ্বেগ' প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী গিলিয়ান কিগান। শুক্রবার এক্স (টুইটার) পোস্টে তিনি বলেন, 'আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে কিছু শিশু স্কুলের দিনে রাজনৈতিক প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছে।' তিনি যোগ করেন, 'কর্মসূচির জন্য স্কুল বাদ দেওয়া অগ্রহণযোগ্য'।
শিক্ষা বিভাগের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন: 'শিশুদের স্কুলে থাকা উচিত। যদিও আমরা স্বীকার করি যে এই তরুণদের শান্তিপূর্ণভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে সামর্থ্যবান হওয়া উচিত। কিন্তু আমরা তাদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়া উপেক্ষা করতে পারি না।'
শুক্রবার লন্ডনে কতজন বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল তা বলতে পারেনি মেট্রোপলিটন পুলিশ।
যুক্তরাজ্যে স্কুল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে অংশ নেয়া অনেকটাই বিরল। চার বছর আগে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ে উদ্বেগ তুলে ধরতে স্কুল শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে যুক্তরাজ্য এবং বিশ্বজুড়ে একত্রিত হয়েছিল।