জামালপুরের মেলান্দহে আন্তঃস্কুল ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনার জেরে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত উপজেলার মালঞ্চ এম এ গফুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিচারের দাবিতে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
এতে জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ মহাসড়কে প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে বেলা ১টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেলিম মিঞা ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
সোমবার ( ৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মেলান্দহ উমির উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃস্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টের শেষ মুহূর্তে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আহত শিক্ষার্থীরা মালঞ্চ এম এ গফুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। আহতরা জামালপুর সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার সাধুপুর হূমায়ন কবির টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট ও মালঞ্চ গফুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্তঃস্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলা চলছিল। খেলার নির্ধারিত সময় ৪০ মিনিট শেষ হলেও দুই পক্ষের কেউ গোল করতে পারেনি। পরে সময় বাড়িয়ে দেওয়া হলেও ফলাফল ড্র হয়। এত জয়-পরাজয় নির্ধারণ করার জন্য টাইব্রেকার আয়োজন করেন খেলার পরিচালক। টাইব্রেকার পাঁচটি করে শট করে উভয় পক্ষের খেলোয়াড়। সেখানে পাঁচটি করে গোল করে উভয় পক্ষই।
পরে সাধুপুর হুমায়ুন কবির টেকনিক্যালের খেলোয়াড় ষষ্ঠ শট করলে গোলপোস্টের বাইরে দিয়ে বল চলে গিয়ে গোলরক্ষকের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তির গায়ে লেগে বলটি ফিরে আসে। এ সময় পাশেই দাঁড়িয়ে একজন খেলোয়াড় পুনরায় শট করলে বল গোলপোস্টের ভেতরে চলে যায়। এতে মালঞ্চ গফুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গোল হয়নি বলে চিৎকার করে ওঠে। অন্যদিকে সাধুপুর হুমায়ুন কবির টেকনিক্যালের শিক্ষার্থীরা গোল হয়েছে বলে দাবি করে।
পরে খেলা পরিচালক ইব্রাহিম হোসেন পুনরায় সাধুপুর হুমায়ুন কবির টেকনিক্যাল স্কুলের শিক্ষার্থীদের ষষ্ঠতম শট করার আহ্বান জানান। এতে মালঞ্চ উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলোয়াড়েরা রাজি না হলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় মালঞ্চ উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়।
মালঞ্চ এম এ গফুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কফিল উদ্দিন মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, ‘গতকাল মেলান্দহ ও উমির উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আন্তঃস্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টে আমার স্কুল ও সাধুপুর টেকনিক্যাল স্কুলের মধ্যে খেলা চলছিল। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার কারণে ৪০ মিনিট খেলা হয়। ৪০ মিনিট খেলায় কোনো পক্ষেই গোল হয়নি, পরবর্তীতে টাইব্রেকার হয়। এতে দুই পক্ষই সমান-সমান গোল করে। এরই মধ্যে মেলান্দহ উমির উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাধুপুর টেকনিক্যাল স্কুলের শিক্ষার্থীরা মিলে আমার বিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে মারধর করে। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটিয়েছে উমির উদ্দিনের শিক্ষার্থীরা।’
অভিযোগের বিষয়ে সাধুপুর হুমায়ুন কবির টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এই ঘটনার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিল ঘটনাস্থলে।’
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজাদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘আজ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে সড়ক অবরোধ করেছিল। আমি ও ইউএনও স্যারসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি। এই ঘটনা নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছি। তবে এখন উপজেলায় আন্তঃস্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট বন্ধ করা হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেলিম মিঞা বলেন, ‘এ ঘটনায় শিক্ষক ও অভিভাবকেরা যে দাবিগুলো তুলেছেন এ নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করব।’