দৈনিক শিক্ষাডটকম, ফেনী : উচ্চ মাধ্যমিকে বিভাগ পরিবর্তনের জটিলতায় পড়েছে ফেনী সরকারি কলেজের ৩৩ জন শিক্ষার্থী। তারা ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়ে বিজ্ঞান বিভাগে আসার আবেদন করেছিল এবং বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়নরত। পরীক্ষার ২-৩ মাস বাকি থাকলেও বোর্ড থেকে বিভাগ পরিবর্তনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত আসেনি কোন সিদ্ধান্ত। ফলে আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষায় তাদের অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও এই ৩৩ জন শিক্ষার্থী ফেনী সরকারি কলেজে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভর্তি হয়। পরবর্তীতে তারা বিভাগ পরিবর্তনের জন্য আবেদন করে। কলেজ কর্তৃপক্ষও তাদের আবেদন আমলে নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নের সুযোগ করে দেয়।
জানা গেছে, একাদশ শ্রেণির সাময়িক, বার্ষিক ও দ্বাদশ শ্রেণির প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষায়ও তারা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্ডে ভর্তিকৃত বিভাগ ও বিষয়ের নাম আসাতে জটিলতা তৈরি হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি আমলে নিয়ে কলেজ থেকে ৩৩ জন শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন কার্ডে বিভাগ ও বিষয় কোড সংশোধনের অনুরোধ জানিয়ে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর চিঠি পাঠানো হয়।
সূত্র জানায়, সংশোধনের জন্য নির্ধারিত টাকাও ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে। অথচ দীর্ঘদিনেও এ ব্যাপারে কোনো সাড়া মেলেনি। আগামী জুনের মাঝামাঝিতে এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও এখনো কোন সিদ্ধান্ত না আসায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে এই শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ তারা মানবিক বিবেচনায় হস্তক্ষেপ চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী জানান, সে বর্তমানে মানবিক বিভাগে ভর্তি রয়েছে। কিন্তু সে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। সারাবছর বিজ্ঞানের প্রস্তুতি নিলেও এখনো বিভাগ পরিবর্তন না হওয়ায় জটিলতায় পড়তে হয়েছে। তিনি বলেন, বিভাগ পরিবর্তনের জন্য সবকিছু নিয়ম মেনে আবেদন করেছি এবং টাকাও দিয়েছি। কেন পরিবর্তন হচ্ছে না তা জানিনা।
তবে কলেজের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ফেনী সরকারি কলেজে ভর্তি হতে এসব শিক্ষার্থী অন্য বিভাগে ভর্তি হয়েছিল। এতে তারা যথাযথ ভর্তি প্রক্রিয়া না মেনে অনৈতিক কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে নিজেদের ভর্তি নিশ্চিত করে। পরবর্তী সময়ে এসে বিভাগ পরিবর্তনের আবেদন করে।
ফেনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মোক্তার হোসেইন বলেন, বিষয়টি জটিল হলেও কলেজ কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার কমতি নেই। আমি আমার জায়গা থেকে তাদের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নিজামুল করিম বলেন, বিভাগ পরিবর্তনের আবেদনের বিষয়ে অবগত হয়েছি। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভাগ পরিবর্তন সংক্রান্ত নীতিমালার ৫ দশমিক ১১ দফা অনুযায়ী কোন শিক্ষার্থী ব্যবসায় শিক্ষা বা মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়ে পরবর্তী বিজ্ঞান বিভাগে আসতে পারবে না। এছাড়া পরিবর্তনের প্রক্রিয়াটি প্রথম বর্ষে করার কথা থাকলেও এই শিক্ষার্থীরা এইচএসসি পরীক্ষার ঠিক আগে এসে এমনটি করছেন। এখন মন্ত্রণালয় থেকে বিভাগ পরিবর্তন সংক্রান্ত দফা শিথিল করলেই আমাদের সিদ্ধান্ত দেওয়ার সুযোগ রয়েছে, অন্যথায় কোন সুযোগ নেই।
তিনি আরো বলেন, নির্দিষ্ট জিপিএ না থাকায় এই শিক্ষার্থীরা মূলত ফেনী সরকারি কলেজে ভর্তির সুযোগ পেতে বিজ্ঞান বিভাগের পরিবর্তে অন্য বিভাগে ভর্তি হয়েছিল। এটি এক প্রকার প্রতারণা। এ বিষয়ে অভিভাবক ও শিক্ষকদের আরো সচেতনতা প্রয়োজন। শিক্ষাক্ষেত্রে এমন কিছু হলে দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।