আমাদের বার্তা ডেস্ক: কয়েক মাস আগেও সুবাস ঘিমিরে ভাবছিলেন, খানিকটা ভালো উপার্জন করতে মাধ্যমিক পরীক্ষার পর বিদেশ পাড়ি দেবেন। কিন্তু তার স্কুলের নতুন একটা ক্লাস তার সে ভাবনায় ছেদ ঘটিয়েছে।
নেপালের কাঠমান্ডু শহরের দরবার উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র সুবাস। গত ৮ শুক্রবার তার স্কুলে বসছে এক অন্যরকম পাঠের মেলা। সেদিন কেউ পাঠ্যবই নিয়ে স্কুলে আসেন না। কাঠমান্ডু মেট্রোপলিটন সিটি কর্তৃপক্ষ স্কুলগুলোতে এক নতুন প্রকল্প নিয়েছে – বইমুক্ত শুক্রবার।
সেদিন শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবইয়ের বাইরের পাঠ নেন। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্যে সেদিন থাকে বিভিন্ন কারিগরি কোর্স। সুবাস পছন্দ করে নিয়েছেন মোবাইল ফোন মেরামতের কোর্স। এই কোর্স তাকে ভরসা জুগিয়েছে দেশে থেকেই উপার্জন করার। সতের বছর বয়সি সুবাস পরিবারের সবচেয়ে কনিষ্ঠ।
বইমুক্ত শুক্রবার প্রকল্পটি কাঠমান্ডুর ৮৯ স্কুলে প্রাথমিক ভাবে চালু করা হয় ২০২৩ এর এপ্রিলে।, শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা শেখানো এবং অন্যান্য পাঠ্যক্রম বহির্ভূত চর্চায় উদ্বুদ্ধ করাই এর উদ্দেশ্য।
‘মোবাইল মেরামতের প্রশিক্ষণ আমাকে আশা যুগিয়েছে ও আত্মবিশ্বাস দিয়েছে,’ বলেন সুবাস।
তিনি আরো বলেন, আমার দুই ভাই বিদেশে থাকে। আমি যে কোর্স করছি তা যদি আমাকে এখানে কাজ দিতে পারে, তাহলে আমাকে উপার্জনের জন্য বিদেশে যেতে হবে না।
সুবাস মনে করেন, যদি কোর্সটি চলতে থাকে তবে এটি তার মতো আরও অনেক শিক্ষার্থী নেপালে থাকতে এবং নিজেরাই কিছু করার ভরসা পাবেন।
সুবাস জানান, এই কোর্সটি শুরু হওয়ার পরে থেকে তার বন্ধুরা খুব খুশি এবং তারা স্কুলে আরও নিয়মিত হয়েছেন।
তিনি বলেন, নগর কর্তৃপক্ষ যখন এই বৃত্তিমূলক কোর্স শুরু করার কথা বিবেচনা করছিলো তখন শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা সন্দিহান ছিলেন যে এটি সারা বছর চলতে পারবে কিনা।
দরবার হাই স্কুলের অধ্যক্ষ রাজ অধিকারী বলেন, এটি ছাত্র ও তাদের শিক্ষক উভয়ের জন্যই একটি দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা, কিন্তু আমরা আরো তিন মাস সঠিক মূল্যায়ন করতে পারবো।
দরবার স্কুলে মোবাইল মেরামত কোর্সের পাশাপাশি নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সবজি চাষ কোর্সও রয়েছে।
রাজ অধিকারী বলেন, শিক্ষার্থীরা স্কুল প্রাঙ্গণে সবজি ও ভেষজ গাছ লাগিয়েছে।
ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলটি রাষ্ট্রীয় নাচঘরের সহযোগিতায় নাচ ও গান শেখাচ্ছে।
কাঠমান্ডু মেট্রোপলিটন সিটির শিক্ষা বিভাগের প্রধান সীতা রাম কৈরালার জানান, নগর কর্তৃপক্ষ ২০ মিলিয়ন রুপির তহবিল দিয়ে পাইলট প্রকল্পটি চালু করেছিল।
আমরা অভিভাবক ও সকল কমিউনিটি স্কুলের কাছ থেকে খুবই ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।
উদ্যোগের অংশ হিসেবে, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ঐচ্ছিক স্বল্পমেয়াদি কোর্স থেকে কৃষিসহ ১০টি বিষয়ে শিখছেন। এগুলো হলো- শহুরে কৃষি, কসমেটলজি, ছুতারের কাজ ও কাঠ-খোদাই, রন্ধনশিল্প, ফ্যাশন ডিজাইন, কারেন্টের তার মেরামত, মোবাইল ও ইলেকট্রনিক মেরামত, প্লাম্বিং, সেলাই এবং ভাস্কর্য।
ইতোমধ্যে অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্যে বিভিন্ন পাঠ্যক্রম বহির্ভূত বিষয় নিয়ে কাজ করছেন। বিদ্যালয়গুলো প্রবন্ধ রচনা, সঙ্গীত ও কবিতা আবৃত্তিসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের আয়োজন করে আসছে।
যখন থেকে 'বই-মুক্ত শুক্রবার' শুরু হয়েছে, তখন থেকে শিক্ষার্থীদের আরও খুশি দেখাচ্ছে, বলেন জ্ঞানোদয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক ইউনিট প্রধান সীতা ভুসাল৷
স্কুলটির নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য সেলাই ও মোবাইল মেরামতের প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য পাঠ্যক্রমিক ক্রিয়াকলাপ যেমন সঙ্গীত, নাচ, অঙ্কন ও অন্যান্য ক্লাসের শিক্ষার্থীদের জন্য বক্তৃতা প্রতিযোগিতা পরিচালনা করছে।
ভুসাল বলেন, আমি মনে করি, যদি সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, এই প্রকল্প শিক্ষার্থীদের দুর্দান্তভাবে অনুপ্রাণিত করবে। এখানে তারা তাদের পছন্দের বিষয়টি শিখতে পারছেন।
কাঠমান্ডু মেট্রোপলিটন সিটির সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা রেশু আরিয়াল বলেন, বইমুক্ত শুক্রবার' এর উদ্দেশ্য হল মানুষকে জানানো যে কেবল বইই শিক্ষার উৎস নয়।
আমরা দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আরও ব্যবহারিক পদ্ধতির সাথে শিক্ষার্থীদের জন্য স্থানীয় শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছি।