এম এইচ ইমরান, ঢাবি : অমর একুশে বইমেলায় বঙ্গীয় মানুষের হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রদর্শনী মুগ্ধ করছে আগত দর্শনার্থীদের। বৈচিত্র্য ও নান্দনিকতায় ঘেরা এসব স্টলগুলোতে এবারে ফুটে উঠেছে গ্রামীণ চিত্র, রিকশার নান্দনিকাতা, ঐতিহাসিক স্থাপত্য, হস্তশিল্পপের সৌন্দর্য। ফলে মেলায় ঘুরতে বা বই কিনতে আসা পাঠকদের দৃষ্টি কাড়ছে এসব সৃষ্টিশৈলী স্থাপনা । সম্প্রতি বইমেলা ঘুরে দেখা যায়, শিল্পসমৃদ্ধ এসব স্টলে সমানতালে রয়েছে মানুষের ভিড়।
শিল্পী-ঐতিহাসিকদের হাতের লেখনিতে যেভাবে চিত্রায়িত হয় ইতিহাস-ঐতিহ্য, বইমেলার স্টলগুলোতে প্রতিবছর তারই বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়। এ বছরও এর ব্যাতিক্রম হয়নি। এবারে মেলায় শিল্পমণ্ডিত স্টল-প্যাভিলিয়নগুলো এখন পাঠক ও দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষণের বস্তু। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও স্টল-প্যাভিলিয়নগুলোকে ভিন্ন রূপে সাজাতে একটুও কার্পণ্য করেনি প্রকাশনীগুলো।
বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের কিছুটা ভিতরে ঢুকলে চোখে আটকাবে এতো নান্দনিক গ্রামীণ বাড়িতে। বিভিন্ন জাতের কাঠ, প্লেইনশিট দিয়ে তৈরি কারুকাজ মিশ্রিত আকাশ প্রকাশনীর প্যাভিলিয়ন নজর কাড়ছে সবারই। মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তুলতে দেশীয় কাঠ ও টিন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে আস্ত প্যাভিলিয়ন।
আকাশ প্যাভিলিয়নের ব্যবস্থাপক রায়হান বলেন, অনেক পাঠক আসছেন, ছবি তুলছেন, বইও কিনছেন। আমাদের বেশ ভালো অনুভূতি হচ্ছে।
গ্রামীণ পরিবেশের নান্দনিকতা ও ঐতিহ্য ফুটিয়ে তুলেছে নবান্ন প্রকাশনীও। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অস্থায়ী বসবাসের মাচা ঘরের আদলে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই প্যাভিলিয়ন। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো এবারও ব্যতিক্রমী ও নজরকাড়া প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করেছে অন্যপ্রকাশ। তাদের প্যাভিলিয়নকে ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহার করেছে ঐতিহ্যবাহী ‘রিকশাচিত্র’। জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া ‘রিকশাচিত্র’র এমন সুন্দর আয়োজনকে উপভোগ করছেন বইপ্রেমী ও দর্শনার্থীরাও। এই প্যাভিলিয়নটিকে ঘিরে ভিড় করছেন তারা।
এমন ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনের ব্যাপারে অন্যপ্রকাশের ম্যানেজার জাহিদুর রহমান বলেন, ‘রিকশাচিত্রের পরিকল্পনাটি আমাদের প্রকাশকের। মূলত অমর একুশে বইমেলায় আমাদের প্যাভিলিয়নের সৌন্দর্য বাড়াতেই এমন আয়োজন করা হয়েছে।’
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের আদলে সাজানো মিজান পাবলিশার্সের প্যাভিলিয়নটি আলাদা নজর কেড়েছে। গাদাগাদা বইয়ের স্তুপ আকৃতিতে সাজানো হয়েছে পুথনিলয় প্রকাশনীর প্যাভিলিয়ন। মুসলিম স্থাপত্যের নিদর্শন ষাটগম্বুজ মসজিদের আদলে স্টল তৈরি করেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ।
প্রতি বছরের মতো এবারও নান্দনিক স্টলের জন্য বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে পুরস্কারের। জানানো হয়েছে, এ বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে। গত বছর এই পুরস্কার পেয়েছিল উরকি, নবান্ন এবং পুথিনিলয় প্রকাশনী।