শ্রেণিকক্ষ দখল করে দীর্ঘদিন বসবাস ও কর্মচারীকে দিয়ে জোর করে বডি ম্যাসাজ নেয়া রাজধানীর উত্তরার নওয়াব হবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অবৈধ অধ্যক্ষ মো. শাহীনুর মিয়াকে দায়িত্ব ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। তদন্তে তিনি প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক কোনোটাই নন বলে প্রমাণিত হয়েছে। তার বডি ম্যাসাজ কাণ্ডসহ বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে গত ১৯ জুন দৈনিক আমাদের বার্তায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তারপরই তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু করে শিক্ষা প্রশাসন।
গতকাল রোববার বডি ম্যাসাজ নেয়া অধ্যক্ষকে দায়িত্ব ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে অধিদপ্তর। দায়িত্ব ছাড়ার পাশাপাশি সহকারী প্রধান শিক্ষক দীপ্তি চক্রবর্তীকে ভারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, অধ্যক্ষ শাহীনুর মিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছিলেন একজন অভিভাবক। দুদকের নির্দেশে গত ফেব্রুয়ারিতে সেসব অভিযোগ তদন্ত শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। গত ১০ ফেব্রুয়ারি এসব অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সবুজবাগ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ শামীম আরাকে।
ওই তদন্তের বরাতে অধিদপ্তর বলছে, অধ্যক্ষ শাহিনুর মিয়ার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কেনো তার বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চেয়ে তাকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু তিনি যথাসময়ে জবাব দেননি। এমনকি পরে জবাব পাঠালেও তা সন্তোষজনক হয়নি।
অধিদপ্তর আরো বলছে, তদন্ত কর্মকর্তার মন্তব্যের আলোকে শাহীনুর মিয়ার বিরুদ্ধ অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। প্রধান শিক্ষক পদ থেকে পদত্যাগ করায় ও অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ বিধিসম্মত না হওয়া তিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষ কোনোটিই নয় বলে তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষক দীপ্তি চক্রবর্তীকে ভারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হলো।
এ ছাড়া অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠানটির নতুন অ্যাডহক কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া, যোগ্য শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা ও ননএমপি সহকারী শিক্ষক মাহমুদা খাতুনের বিধিমোতাবেক প্রাপ্য বকেয়াসহ বেতন প্রতিষ্ঠান থেকে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের অভিযোগ, কলেজের দুটি শ্রেণিকক্ষ দখল করে দীর্ঘদিন বসবাস করছিলেন অধ্যক্ষ। পাঁচ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানের ফান্ড থেকে অবৈধভাবে বাড়িভাড়াও নিয়েছেন তিনি।
একসময় প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের আপত্তির মুখে বেতনের সঙ্গে বাড়িভাড়া নেয়া বন্ধ করলেও ‘ভুয়া ভাউচার’ তৈরি করে ঠিকই তুলে নিয়েছেন সমপরিমাণ টাকা। তার বাসার ইউটিলিটি বিল পুরোটাই বহন করছে কলেজ। সব কাজের কাজি ওই অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের দিয়ে বডি ম্যাসাজও করিয়ে নেন। নিজের সুবিধার জন্য সবাইকে তোপের মুখে রাখেন শাহীনুর মিয়া। প্রতিষ্ঠান প্রধান পদ থেকে পদত্যাগ করে অধ্যক্ষ হিসেবে অবৈধভাবে নিয়োগ পান। কিন্তু তিনি ওই পদেই রয়ে যান। নিজের কর্তৃত্ব টিকিয়ে ওই অবৈধ অধ্যক্ষ শিক্ষকদের এমপিওভুক্তও করতেও চাননি।এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে অধ্যক্ষ মো. শাহীনুর মিয়ার সঙ্গে দৈনিক আমাদের বার্তার পক্ষ থেকে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া মেলেনি।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।